কবিতা মনকে আন্দোলিত করে

পাঠের আসরে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’—‘কবিতার কথা’ শিরোনামের একটি লেখায় লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ। ‘বেতের ফলের মতো চোখ’, ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ’, ‘মোরগ ফুলের মতো লাল আগুন’ ইত্যাদি উপমায় সুশোভিত যাঁর কবিতা, একমাত্র তিনিই তো এ কথা বলতে পারেন। চিত্রকরের মায়ায় আর ভালোবাসায় রং–তুলির টানে ছবি যেমন বাস্তব হয়ে ওঠে, চোখের আরাম হয়, চিত্রকল্পের ব্যঞ্জনায় জীবনানন্দের কবিতারও চিত্ররূপ পাঠক দেখতে পান।

একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতাকে শরীরের সঙ্গে তুলনা করলে পেটের অপ্রয়োজনীয় মেদের মতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেদের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। কিন্তু এখানেই অনন্য জীবনের কবি জীবনানন্দ দাশ। তাঁর কবিতার সম্পূর্ণ অংশই যেন শরীর। তরঙ্গিনীর উত্তাল ঢেউয়ের মতো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ভাবনার ইন্দ্রজাল।

‘আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’ বাংলা কবিতার এমন একজন পাঠক খুঁজে পাওয়া দুর্লভ, যিনি কিনা মনে মনে একবার–দুবার পঙ্‌ক্তিটি আওড়াননি। পঙ্‌ক্তিটি কবির ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের ‘বনলতা সেন’ শিরোনামের কবিতার। পৌষ ১৩৪৯ (ডিসেম্বর ১৯৪২) বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা ভবন’ থেকে প্রকাশিত ‘এক পয়সায় একটি’ গ্রন্থমালায় ক্ষুদ্র কাব্যসংকলনরূপে ‘বনলতা সেন’ প্রকাশিত হয়। প্রকাশক জীবনানন্দ দাশ নিজেই। গ্রন্থভুক্ত কবিতার সংখ্যা ১২টি। ‘বনলতা সেন’, ‘কুড়ি বছর পরে’, ‘ঘাস’, ‘হাওয়ার রাত’, ‘আমি যদি হতাম’, ‘হায় চিল’, ‘বুনো হাঁস’, ‘শঙ্খমালা’, ‘নগ্ন নির্জন হাত’, ‘শিকার’, ‘হরিণেরা’ ও ‘বিড়াল’।

কবিতা মনকে আন্দোলিত করে, ভাবনার গভীরে নিমজ্জিত অন্ধকারে আলো জ্বেলে দেয়। আর এ ক্ষেত্রে  জীবনানন্দ দাশের কবিতা হলে তো কথাই নেই। সোনার আলোয় পাঠকের চোখমুখ জেগে ওঠে। যশোর বন্ধুসভার পাঠচক্র অনুষ্ঠানেও ব্যতিক্রম হয়নি। বন্ধু স্বপ্না খাতুনের ‘বনলতা সেন’ কবিতা আবৃত্তির পরপরই এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

গতকাল শুক্রবার যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের ১২টি কবিতা নিয়ে আয়োজিত এ পাঠচক্রে জীবনানন্দের জীবন, কর্ম ও কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন যশোর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, অর্থ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ও বন্ধু কামরুজ্জামান সাদ।

বন্ধুদের আলোচনার পর শুরু হয় অতিথিদের আলোচনা পর্ব। মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইকরামুল কবীর। আলোচনা করেন ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন, সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর, প্রথম আলোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, জেলা সহকারী তথ্য কর্মকর্তা এলিন সাঈদ-উর রহমান ও উদ্যোক্তা সাহেদ চৌধুরী।

গান, কবিতা, কথামালায় মুখর এ অনুষ্ঠানে বাঁশিতে গানের সুর তুলে শোনান মোহন মল্লিক। যশোর বন্ধুসভার সভাপতি লাকি রানী কাপুড়িয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যশোর বন্ধুসভার পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক সুমন রেজা।

সাংগঠনিক সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা