উপবৃত্তির সব টাকাই বন্যার্তদের জন্য দিয়ে দিল শিশুশিক্ষার্থী তাসফিয়া

বন্যার্তদের জন্য সহায়তা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে শিক্ষার্থীরাছবি: বন্ধুসভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া হাসান। মায়ের কাছে জমা ছিল তার ছয় মাসের উপবৃত্তি পাওয়া ৯২০ টাকা। মায়ের অনুমতি নিয়ে সে সব টাকাই বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য তুলে দিয়েছে বন্ধুসভার বন্ধুদের হাতে।

খুদে শিক্ষার্থী তাসফিয়া প্রথম আলোকে বলে, ‘টিভিতে বন্যার খবরে দেখি মানুষের কষ্ট। সেখানে শিশুদেরও দেখে মনে খুব কষ্ট লাগে। তাই উপবৃত্তির সব টাকা দিয়েছি।’

দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর দুর্গত মানুষের জন্য সারা দেশ থেকেই মানুষ সাহায্য পাঠাচ্ছে। প্রথম আলো বন্ধুসভাও পিছিয়ে নেই। বানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘব করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বন্ধুসভার বন্ধুরা অর্থ সংগ্রহ করছেন। ২৭ আগস্ট টাকা তুলতে যান শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এই বিদ্যালয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে বড় একটি মাটির ব্যাংক। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এখানে জমা করে তারা। নাম রাখা হয়েছে ‘সঞ্চয় ব্যাংক’। এ ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে সহপাঠী, সহপাঠীর মা–বাবা বা এলাকার দুস্থ মানুষের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। এবার বন্যার্তদের সহায়তায় গঠিত প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলের জন্য মাটির ব্যাংকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুদের হাতে তুলে দেয় শিশুশিক্ষার্থীরা।

দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খুদে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে মাটির ব্যাংকটি গ্রহণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার মাশরুফা খাতুন, মো. মঈন ও আল মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন, সহকারী শিক্ষক যোবেদা খাতুন, ফারজানা ইয়াসমিন, সাবিহা আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

বন্যার্তদের জন্য সহায়তা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ছবি: বন্ধুসভা

প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন জানান, মাটির ব্যাংক থেকে কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থীর বাবাকে চিকিৎসার জন্য সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। ব্যাংকে বেশি জমা ছিল না। রোববার সবাইকে বলা হয় বাড়ি থেকে টাকা আনতে। তৃতীয় শ্রেণির তাসফিয়া হাসান উপবৃত্তির পাওয়া ৯২০ টাকা নিয়ে এসে জমা দেয়। মা-বাবার অনুমতি নিয়ে দিল কি না জানতে মাকে জিজ্ঞেস করা হয়। মা জানান, ‘তাসফিয়া বাড়িতে এসে বলে বন্যার্তদের সাহায্য করতে চায়। তাকে ১০০ টাকা দিই। সে বলে, এত অল্প টাকা আমি দিতে চাই না। উপবৃত্তির ছয় মাসের সব টাকা (৯২০) দিতে চাই। তাকে সব টাকা দিয়ে দিই। মেয়ে আমার মানবিক মানুষ হতে শিখেছে জেনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছে।’

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, টিফিনের সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং ওই টাকা দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব তৈরির জন্য বিদ্যালয়ে মাটির ব্যাংক চালু করা হয় ২০১৮ সালে। এবার বন্যার্তদের জন্য দেওয়া হলো ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শিক্ষকদের চার হাজার টাকা রয়েছে। ২০২২ সালে সিলেটের বন্যার্তদের জন্য মাটির ব্যাংক থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পাঁচবারের মতো দুস্থ মানুষকে সহায়তা দেওয়া হলো মাটির ব্যাংক থেকে।

জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা