ভালোবাসার বার্তা নিয়ে বসন্ত উৎসব
প্রকৃতিতে এখন রূপ ও রঙের মেলা। শিমুল-পলাশ ফুলের রাঙা সৌন্দর্যের পাশাপাশি সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। বাতাসে বইছে বসন্ত আর ভালোবাসার সুবাস। বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের বক্তব্যের শুরুটা তাই ভালোবাসা দিয়ে। বসন্তকে প্রেমের ঋতু হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
১৮ ফেব্রুয়ারি, বিকেল সাড়ে পাঁচটা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ের দশম তলার সভাকক্ষে তখন সাজ সাজ রব। কক্ষজুড়ে বাসন্তী রঙের ফুল। বন্ধুরাও এসেছেন একই রঙের সাজে। নারীদের বসন বসন্তের হলুদ ও ভালোবাসার লাল রঙের মিশেলে বাহারি শাড়ি; কারও খোঁপায় শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ফুল। ছেলেদের গায়ে পাঞ্জাবি। উপলক্ষ ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ অনুষ্ঠানের রং-রসে তৃষিত হৃদয় সিক্ত করে, ভালোবাসার আবিরমাখা এক সন্ধ্যা যাপন।
মহানগরের বন্ধু জয়শ্রী চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে পৃথিবীময় ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়ে ঢাকা মহানগরের সভাপতি সাইদুল হাসান বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে এই যে এত যুদ্ধ হচ্ছে, এটা আমরা চাই না। তাই আমাদের স্লোগান “বসন্ত আহ্বানে, ভালোবাসি জনে জনে”।’ এর আগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুরা। নাচ, গান, জাদু, অভিনয়সহ সাড়ে তিন ঘণ্টার নানা আয়োজনে বসন্তবরণের এই উৎসবে জাতীয় পর্ষদ, ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৯টি বন্ধুসভার শতাধিক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বন্ধুদের শুদ্ধ দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষেও নিবেদিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক।
কেন্দ্রীয় আয়োজনের বাইরে এবারও ড্যাফোডিল বন্ধুসভা ঘটা করে আয়োজন করে ‘ড্যাফোডিলে বসন্ত ১৪৩০’। এ উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নলেজ ভ্যালিতে আয়োজন করা হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল থেকে শুরু হয়ে দুই পর্বের এই উৎসবের প্রথম পর্বে ছিল মেহেদি ও পিঠা উৎসব এবং দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘ফাগুনের রঙে বসন্ত’ শিরোনামে ক্যাম্পাসে বসন্তবরণ উৎসবের মূল আয়োজনটি করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল পিঠা উৎসব, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনা, র্যাম্প প্রদর্শনীসহ অনেক কিছু। এই দুই বন্ধুসভার আয়োজনে জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে অতিথি হিসেবে যোগ দেন উপদেষ্টা সাজেদ ফাতেমী, সহসভাপতি সোলায়মান কবির ও মাহবুব পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক জাহিদ ফেরদৌস।
‘বাসনার রঙে মিশে, চলো মাতি বসন্তে’ স্লোগানে বসন্তকে বরণ করে নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। শাড়ি, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরে ‘বসন্ত উৎসবে’মেতেছিলেন বন্ধুরা। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল কালের বিবর্তনে বিস্মৃতপ্রায় বাঙালি খাবার মোয়া, খই, কদমা, কটকটি, মুড়ি, নিমকি। সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল বাঙালিয়ানা সাজের নাচ, গান, অভিনয়সহ কবিতা আবৃত্তি। এই অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে যুক্ত হন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদোয়ান মাহমুদ রেজা।
মনোমুগ্ধকর গল্প-গানে, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ শিরোনামে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসন্তবরণ উৎসব করে রংপুর বন্ধুসভা। বসন্তকে বরণ করে নিতে নোয়াখালী বন্ধুসভার আয়োজন করে ‘বসন্ত আড্ডা’। আড্ডায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বন্ধুদের প্রিয়জনদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠি পড়ে শোনান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাজকির হোসেন।
বরিশাল বন্ধুসভা আয়োজন করে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ রম্য বিতর্ক। কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন রেখে ২২টি বিড়াল পোষা একটি পরিবারকে ২২টি ফুল দিয়ে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানায়। আর বান্দরবান বন্ধুসভা পথে ঘুরে ঘুরে পর্যটকদের গোলাপ বিলিয়ে ভালোবাসা বিনিময় করে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন করে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া বন্ধুসভার উদ্যোগে ভালোবাসা ও বসন্ত দিবসে জহির রায়হানের উপন্যাস আরেক ফাল্গুন নিয়ে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘বন্ধুদের সঙ্গে বসন্তবরণ’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা নানা আয়োজনে ঋতুরাজ বসন্ত ও ভালোবাসাময় বিশেষ দিনটি বরণ করে নেয়।