‘আচকে আমার খুব ভালো ঠেকচে, মনের মদ্দি আনন্দ হচ্চে। একন আমি ঠিকমতো ঘুমতি পারবানে। একটা চাল হলিই আমার হয়ে যেত, সেখানে তুমরা একটা ঘর করে দিলে।’ ঝিনাইদহ বন্ধুসভার পক্ষ থেকে বাড়ি উপহার পেয়ে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন গৃহহীন জয়কালী দাস। এ সময় তাঁর চোখে আনন্দাশ্রু ঝরছিল।
জয়কালী দাসের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের খড়িখালি গ্রামের দাসপাড়ায়। ৭০ বছর বয়সী গৃহহীন এই বৃদ্ধের উপার্জন করার মতো নেই শারীরিক সক্ষমতা, নেই দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা। রাতে ঘুমাবে, তেমন মাথা গোঁজার মতো জায়গাও নেই। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পলিথিন পেঁচিয়ে নিজের ভিটায় বর্ষা-শীত পার করছেন। নিকটাত্মীয়রা খাবার পাঠালে তবেই খেতে পারেন জয়কালী দাস। এ যেন এক নির্মম মানবেতর জীবন।
জয়কালী দাসের এমন কষ্টদায়ক জীবনের গল্প জানতে পারেন ঝিনাইদহ বন্ধুসভার বন্ধুরা। তারপরই সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক তাঁর পাশে দাঁড়াবেন। বন্ধুসভার সদস্যরা নিজেরা টিউশন ফির টাকা বাঁচিয়ে, কেউ অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে আর্থিক তহবিল গঠন করেন। তহবিলে আরও যুক্ত হয় সাবেক বন্ধুদের অনুদান, উপদেষ্টারাও এগিয়ে আসেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফান্ডে অর্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
সহসভাপতি জিসান আহম্মদকে আহ্বায়ক করে একটি সাত সদস্যের উপকমিটি জয়কালী দাসের নতুন স্বপ্নের ঠিকানা তৈরি করার কাজ শুরু করে। বন্ধুরা কেউ বাঁশ কাটেন, কেউ ঢেউটিন কিনতে যান, কেউ কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে হাত লাগান। এভাবে দুদিন ধরে তৈরি হয় নতুন বাসস্থান।
২৪ অক্টোবর, বন্ধুসভার সদস্য ও উপদেষ্টারা খড়িখালি গ্রামে গিয়ে জয়কালী দাসের নিকট বাড়িটি হস্তান্তর করেন। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানবিক এই কাজের উদ্যোগ নেয় ঝিনাইদহ বন্ধুসভা। ছোট্ট আয়োজনে এলাকার নারী-পুরুষরা এসে মিলিত হন। সবাই হাত লাগান নতুন বাড়ি সাজাতে। দেখতে দেখতে নতুন কুটির অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে।
বাস্তবায়ন উপকমিটির সদস্য সচিব সুমনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক সংগঠক শাহিনূর আলম, পৌর মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন, শিক্ষক আলমগীর কবীর, বন্ধুসভার সভাপতি বিপাশা আহমেদসহ অনেকেই। সবাইকে নিয়ে বন্ধু কুটিরের ফিতা কেটে উদ্বোধন করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ বন্ধুসভা