বৃষ্টিভেজা সকালে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হয়ে যায় পলিটেকনিক মাঠ। শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। তারা এসেছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে। দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া এ অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে আসা দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
৩১ মে শুক্রবার দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড ২০২৪’। যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরিচালনায় প্রথম আলো এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে। সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
এদিন সকালে আয়োজক-শিক্ষার্থীদের কিছুটা চিন্তায় ফেলেছিল বৃষ্টি ও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট, তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় বৃষ্টি। খুদে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে মাঠে দাঁড় করান দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বেলুন উড়িয়ে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দীকী ও দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ওয়াদুদ মন্ডল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সাজু, আইসিডিডিআরবির সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও আবদুল ওয়াদুদ পিআপি, প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বিপণন) ইমরান আলী ও সহযোগী বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দীকী বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতায় এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হবে। চিকিৎসক হওয়ার উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, এই শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হবে। সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল মানুষ গড়ে উঠবে।
উদ্বোধনের পর বন্ধুসভার বন্ধুরা সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে চলে তিনটি ক্যাটাগরিতে কুইজ পরীক্ষা। ৫টি কক্ষে ৩০ মিনিট ধরে চলা এই কুইজ পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী। এ দায়িত্বে ছিলেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। পাশাপাশি চলে শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে তৈরি করে আনা দেয়ালিকা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা। সেখানে বিচারকেরা শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দেয়ালিকা দেখে বিচারকার্য পরিচালনা করেন। অলিম্পিয়াডে ছিল কিশোর আলো ও বিজ্ঞান চিন্তার স্টল।
শারমীন আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘গতকাল রাতে বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের বাড়ি দিনাজপুর উপশহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ছোট গুড়গোলা এলাকায়। গতকাল ছেলেকে তার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাই। সেখানে দুই বন্ধু মিলে রাত ১০টা পর্যন্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়ালিকা তৈরি করেছে। ছেলেদের এমন আগ্রহ দেখে খুব আনন্দ লাগছে। তা ছাড়া এখনকার শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে এমন আয়োজনের বেশ মিল রয়েছে। এ জন্য অভিভাবকদেরও আগ্রহ অনেক বেশি।’
দিনাজপুর জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফায়েত আবীর বলে, ‘এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। এই পরীক্ষার জন্য পড়তে গিয়ে কয়েক দিন অনেক নতুন নতুন বিষয়ে জানতে পেরেছি।’
এরপর মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রাইমারি থেকে ১১ জন, জুনিয়র ও সেকেন্ডারি থেকে ১২ জন করে ৩ ক্যাটাগরিতে মোট ৩৫ জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা থেকে জুনিয়র ও সেকেন্ডারি ক্যাটাগরি থেকে তিনটি দলের মোট নয়জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। বিজয়ীরা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। বিজয়ীদের হাতে সনদ, মেডেল ও টি-শার্ট তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী সদস্য মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা করেন দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শুভ রায়, সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দিপু রায়, অনুপ রায়, খেয়া রানী রায়, ব্রততি বিশ্বাস, আরিয়ানা চৌধুরী, বিপ্লব চন্দ্র রায়, তারাজুল ইসলাম, রায়হান কবির, শুভজিৎ রায়, আলী খন্দকারসহ অন্যান্য বন্ধুরা।
বন্ধু, দিনাজপুর বন্ধুসভা