বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামে এ হার বেশি। আর দেশের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে হার অনেক বেশি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বেশি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন থাকলেও অনেকেই মানছেন না। এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই প্রথম আলো বন্ধুসভার এ উদ্যোগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার উদ্যোগে বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা ও নাটিকা প্রদর্শন, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। ১৯, ২০ ও ২১ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতা করে ইউনিসেফ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
১৯ নভেম্বর বেহুলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও কমিউনিটি সংলাপ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন থাকলেও কেউ মানছেন না। এ জন্য জনসচেতনতা দরকার। আজকের এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের মনে রেখাপাত করুক, এ কামনা করি।’
উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় এবং বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক ও সামাজিক জীবনে এর প্রভাব। লটারির মাধ্যমে দুটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুশফিকুর রহমান, সহকারী শিক্ষক কাবিবুর রহমান ও খলিলুর রহমান। শেষে বিজয়ী ছয়জনকে পুরস্কার হিসেবে বই উপহার দেওয়া হয়।
অনেক শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বাল্যবিবাহের কারণে নষ্ট হচ্ছে
২০ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাটিকা প্রদর্শন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বাল্যবিবাহের কারণে আমরা প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থীকে আমাদের ভেতর থেকে হারিয়ে ফেলি। অনেক শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বাল্যবিবাহের কারণে নষ্ট হচ্ছে। সবাইকে একত্র হয়ে এটি প্রতিহত করতে হবে।’
আলোচনা শেষে নাটিকা প্রদর্শন করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
২১ নভেম্বর পৌর এলাকার এম এম হক আইডিয়াল স্কুলে বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা প্রদর্শন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। গম্ভীরায় নানা-নাতির ভূমিকা পালন করেন বন্ধু রাকিবুল হাসান ও জুনায়েদ। দোহার হিসেবে ছিলেন সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদ, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক জাহিদ হাসান, বন্ধু মাসরুফা খাতুন, সিফা বিনতে হাবিব, মিতু ও মেরাজুল ইসলাম।
পরে এম এম হক আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ১১ শিক্ষার্থীর একটি দল একই বিষয় নিয়ে একটি নাটিকা প্রদর্শন করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, বন্ধুসভা যেকোনো ভালো কাজের সঙ্গেই থাকে। তেমনই ভালো কাজের একটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি। বাল্যবিবাহের পাশাপাশি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাবেন বন্ধুরা।
জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা