মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আসর ও পাঠচক্র

মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন (সাদা পাঞ্জাবি ও কালো কটি পরিহিত)ছবি: বন্ধুসভা

নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এক আবেগের নাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তাই মুক্তিযুদ্ধের অনুভব পেতে উল্টাই ইতিহাসের পাতা। সান্নিধ্য খুঁজি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বীর সন্তানদের মুখে একাত্তরের গল্প শুনে আমাদের দেশপ্রেম জাগে, বীর সন্তানদের প্রতি মনে শ্রদ্ধার জন্ম হয়, পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতি সৃষ্টি হয় ঘৃণা।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামালপুর বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আসর ও পাঠচক্র’। ২৯ মার্চ বিকেলে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজনের মধ্যমণি হিসেবে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামে। কর্মজীবনে ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সকাল ১০টায় বন্ধুদের মধ্যে এসে পৌঁছান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রথমে এই বীর সন্তানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন
সংগৃহীত

জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন তাঁর স্মৃতি থেকে একাত্তরের গল্প বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘তখন বর্ষাকাল ছিল। আমরা ১২ জন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য নৌকা দিয়ে ভারতে রওনা দিই। রাত আটটায় বাহাদুরাবাদঘাটে এসে পৌঁছাই। হঠাৎ দেখি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা স্টিমারে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা ১২ জন তখন ভয়ে আল্লাহর নাম নেওয়া শুরু করি। মাঝিকে বলি, কাছে চর দেখা যায়। সেখানে নিয়ে যেতে। সেদিন আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। তারপর এক ঘণ্টার মধ্যে ভারতে পৌঁছে যাই।’

একটু থেমে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন আবার বলা শুরু করেন, ‘এক দিন ক্যাম্পে থাকার পর সকালবেলা হাঁটাহাঁটি করছিলাম। শুনতে পাই মাইকে ডাকাডাকি করছে, উচ্চ ট্রেনিংয়ের জন্য কে যাবা? মাইকের কাছে আসো। পরে আমি রাজি হলাম। আমাকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। ওস্তাদের নির্দেশে ৩২ মাইল হেঁটে যাওয়ার পর ইন্ডিয়ান সৈনিকদের গাড়ি এল। গাড়ি দিয়ে ক্যাম্পে যাই। ১১ দিন ট্রেনিং করি। আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিনের সঙ্গে জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

গল্প বলতে বলতে ওনার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মনে পড়ে নেতা আবু তাহেরের কথা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাংকারে আক্রমণের রাতে ওনার চোখের সামনে মাইন বিস্ফোরণে আবু তাহের পা হারান। গল্প বলা শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন বন্ধুদের বিভিন্ন কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দেন।

সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় পাঠচক্রের আসর। বিষয় ছিল প্রথম আলো ও গ্রামীণফোন কর্তৃক সংগৃহীত ‘একাত্তরের চিঠি’ বইটি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধু সিফাত আব্দুল্লাহ্, সভাপতি ডা. জাকারিয়া জাকি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কানিজ ফাতেমা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হাসান, দপ্তর সম্পাদক সানি সিরাজ, জেন্ডার-সমতাবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল নাঈম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক নাহিদুল হাসান, ম্যাগাজিন সম্পাদক সোমাইয়া সরকার, বন্ধু জুঁই আক্তার, ফাহিম আহমেদ, মো. হামযা, রিফাত হোসেন, সানজিদা আক্তারসহ আরও অনেকে।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা