বিতর্ক আমাদের সহনশীল, ভালো বক্তা ও ভালো শ্রোতা হতে শেখায়
বিতর্কচর্চার মাধ্যমে তরুণদের বিশ্লেষণাত্মক ও সমালোচনামূলক চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা যৌথভাবে ভার্চ্যুয়াল বিতর্ক কর্মশালার আয়োজন করেছে। ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটায় গুগল মিটে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিতার্কিক সিফাত হোসেন। তিনি অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের বিতর্কের মৌলিক কাঠামো, শক্তিশালী যুক্তি তৈরি ও প্রয়োগের কলাকৌশল, তথ্য-উপাত্তের নির্ভুল ব্যবহার এবং কার্যকরভাবে বিতার্কিক দল পরিচালনার কৌশলসমূহ বিশদভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রশিক্ষণ মূলত বিতর্কের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের ওপর আলোকপাত করে, যা অংশগ্রহণকারীদের বিতর্ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে।
বিতার্কিক সিফাত হোসেন বলেন, ‘বিতর্ক আনুষ্ঠানিকতা নয়, চিন্তার উন্মেষ ঘটানো। বিতর্ক আমাদের সহনশীল হতে, একজন ভালো বক্তা ও ভালো শ্রোতা হতে শেখায়। ভালো শ্রোতা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে আমাদের বিতর্কের মঞ্চে যাওয়া জরুরি। একজন ভালো বিতার্কিক হওয়ার জন্য বিতর্কের মর্মার্থ বুঝতে হবে, দাবির পেছনে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে—কী নিয়ে যুক্তি দিচ্ছি এবং কেন আমার দাবি বাস্তবায়িত হওয়া উচিত, তা উল্লেখ করতে হবে। অফুরন্ত তথ্যের ভান্ডার থাকা প্রয়োজন, প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে হবে এবং সৃজনশীল পদ্ধতিতে বিপক্ষ দলকে প্রশ্ন করতে হবে। বৈষম্যমূলক বা আক্রমণাত্মক কোনো কথা বলা যাবে না।’
কর্মশালা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বন্ধুদের নানা কৌতুহল এবং জানা-অজানা প্রশ্নের মাধ্যমে। বিতর্ক কেন করব? কীভাবে একজন দক্ষ বিতার্কিক হয়ে উঠব? বিতর্কের মঞ্চে নিজেকে কীভাবে আত্নবিশ্বাসী প্রমাণ করতে পারি? এমন অনেক প্রশ্নের মাধ্যমে তথ্যবহুল আলোচনা উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
আয়োজকেরা জানান, দুই বন্ধুসভার মধ্যে এই সমন্বিত কার্যক্রম কেবল বিতার্কিকদের প্রশিক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আন্তজেলা সংযোগ বৃদ্ধি এবং জ্ঞানের আদান-প্রদানকে উৎসাহিত করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, ‘এই বিতর্ক কর্মশালা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য বন্ধুদের মধ্যে যুক্তিবোধ, সহনশীলতা ও বিশ্লেষণমূলক চিন্তার বিকাশ ঘটানো। আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম শুধু তথ্য জানুক তা নয়, তারা যেন তথ্যকে বিশ্লেষণ করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে এবং নিজেদের মতামতকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে শেখে।’
নোয়াখালী বন্ধুসভার সহসভাপতি জেরীন ফাহমিদা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বিতর্কচর্চার প্রতি আগ্রহ ছিল। আজকের এই কর্মশালায় যোগদান করে বিতর্কের খুঁটিনাটি আরও বিশদভাবে জানতে পারলাম। আশা করছি, এর প্রতিফলন ভবিষ্যতে সুন্দরভাবে ঘটাতে পারব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘কর্মশালায় অংশ নিয়ে বুঝতে পেরেছি—বিতর্ক শুধু জয়-পরাজয়ের বিষয় নয়, বরং চিন্তা গঠনের একটি চমৎকার মাধ্যম। এখানে শিখেছি কীভাবে একটি দাবি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হয়, সেই দাবির পেছনে যুক্তি দাঁড় করাতে হয় এবং অপর পক্ষের মতকে সম্মান জানিয়ে প্রশ্ন করতে হয়।’
নোয়াখালী বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সানি তামজীদ বলেন, ‘দুই বন্ধুসভার এই যৌথ উদ্যোগে সুন্দর প্রাণবন্ত একটি কর্মশালা সফল হয়েছে। সামনের পথচলায় এই উদ্যোগুলো বন্ধুসভার বন্ধু ছাড়াও বন্ধুসভার বাইরে সুনাম এবং সফলতা বয়ে আনবে।’
দুই বন্ধুসভার নেতৃত্ব ভবিষ্যতে এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও দক্ষতা-উন্নয়নমূলক যৌথ উদ্যোগ নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় নোয়াখালী বন্ধুসভার পক্ষ থেকে যুক্ত ছিলেন সহসভাপতি আবদুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক মো. শিমুল, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক শাহিদা রেশমি, অর্থ সম্পাদক তাসমিয়া ইয়াসমিন, বন্ধু সামিনুর রহমানসহ অনেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি ফারাহ্ উলফাৎ রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাসরুফা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ মাহমুদুল হাসান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান, অর্থ সম্পাদক আলীউজ্জামান নূর, দপ্তর সম্পাদক উৎস আসেফ, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ, বইমেলা সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সোনিয়া খাতুন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য সিফা বিনতে হাবিব, শাকিল হোসেন, আহমেদ ওয়ালিদ, বন্ধু রামিজ আহমেদ, মুশফিক মাহাদি, সাবরিন আখতার, মানসুরা খাতুন, খালিদ বিন ওয়ালিদ, জাহিদ হাসানসহ অন্যরা।