গুণগত খাদ্য খাই, নির্ভেজাল জীবন পাই

কর্মশালায় আলোচনা করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুট প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের প্রফেসর মারুফ আহমেদছবি: বন্ধুসভা

স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুষ্টি—এই তিনটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে একজন ব্যক্তির জন্য সুষম খাদ্য নির্বাচন, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও পুষ্টিমূল্য বজায় রাখা জরুরি। আমাদের সবাইকে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তবেই একজন সচেতন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নাগরিক হিসেবে সমাজ ও দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব। সেই ভাবনায় নিজেকে ফিট রাখতে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে, সুন্দর ও রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় সঠিক খাদ্যভ্যাস। এ লক্ষ্যে ২৬ মার্চ দিনাজপুর বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘গুণগত খাদ্য খাই, নির্ভেজাল জীবন পাই’ শিরোনামে খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক কর্মশালা।

প্রথম আলো দিনাজপুর অফিসে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় বন্ধুসভার বন্ধুরাসহ প্রায় ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুট প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের প্রফেসর মারুফ আহমেদ, দিনাজপুর ডায়াবেটিস ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নাসরিন আখতার এবং বীরগঞ্জ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ফুট কেয়ার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ডিসি রায়।

সবাইকে একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন বীরগঞ্জ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ফুট কেয়ার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ডিসি রায়
ছবি: বন্ধুসভা

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর প্রতিনিধি শৈশব রাজু বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের শরীরের মধ্যে নানা ধরনের রোগ-বালাই বিরাজ করে এবং অনেকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হই। আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে যা শিখব, যা জানব; তার ১% যদি কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের আয়োজন স্বার্থক হবে। সবাই নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হব।’

মূল পর্বে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও ফলমূল নিয়ে ধারণা দিয়ে প্রফেসর মারুফ আহমেদ বলেন, ‘জীবজগতের সব জীবই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যগ্রহণ করে থাকে। দেহের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন, যা জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। তাই বলে আমরা যা খাই তার সবকিছু কিন্তু খাদ্য নয়। খাদ্য, পুষ্টি—দুটি ভিন্ন বিষয়। আমরা যা খাই তা পুষ্টিকর নাও হতে পারে। খাদ্য হলো পুষ্টির উৎস, আর পুষ্টি হলো দৈহিক কার্যকারিতার উপাদান। খাবারের গুনগত মান ধরে রাখতে বেশ খরচ হয়। তাই কম দামী খাবার কখনো নিরাপদ নয়। সব সময় ভালো মানের খাবার খেতে হবে, যার দাম একটু বেশি। অতিরিক্ত তেল ও চর্বি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো বুঝে খাওয়ার পরামর্শ রইল।’

এ ছাড়াও উপস্থিত সবার জন্য দৈনিক আহার, ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও নিয়ম উল্লেখ করে তিনি বেশ কিছু কার্যকরী পরামর্শ দেন। প্রফেসর মারুফ আহমেদ আরও জানান, ক্ষতিকর উপাদান হাইড্রোস, ইউরিয়া, স্যাক্রাফিন, ডাই ফুড কালার ইত্যাদি শরীরে ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। পাশাপাশি ফরমালিন, প্রিজারভেটিভস ও বিভিন্ন কেমিক্যাল নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা তুলে ধরে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েও সহায়তা করেন আলোচক।

খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেন পুষ্টিবিদ নাসরিন আখতার
ছবি: বন্ধুসভা

দ্বিতীয় পর্বে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেন পুষ্টিবিদ নাসরিন আখতার। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে খাবার তৈরি করে খাব, পুষ্টিকর খাবার খাব। আজকাল অসাধু ব্যবসায়ীরা কাপড়ের রং দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে থাকেন। এসব খাবার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই বাইরের খাবার কম খাব। যা খেতে চাই তা বাড়িতে রান্না করে খাওয়ার চেষ্টা করব। এতে আমাদের শরীরে পুষ্টিকর উপাদানগুলো প্রবেশ করে শরীরকে সুস্থ রাখবে।’

কর্মশালায় নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ বিনিময় করে উপস্থিত বন্ধুদের উদ্দেশে উপদেষ্টা ডা. ডিসি রায় বলেন, ‘আমাদের সবাইকে একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে জীবনযাপন করতে হবে। সারা দিনের কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক পরিক্রমার মধ্যে অতিবাহিত করতে হবে। আমাদের যুব বন্ধুদের উচিত এখন থেকেই তাদের শরীরের যত্ন নেওয়া ও দৈনিক রুটিন গুছিয়ে নেওয়া।’

সমাপনী বক্তব্যে দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শুভ রায় বলেন, ‘দিনাজপুর বন্ধুসভা বরাবরই ভালো কাজ করতে চায়। ভালো কিছুর জন্যই আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন। এবারের পর্বে রেখেছি খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক এই কর্মশালা।’ কর্মশালা সঞ্চালনা করেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিন।

কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ব্রততী বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক খেয়া রানী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দিপু রায়সহ দিনাজপুর ও হাবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরা।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা