মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুতোষ উপন্যাস আমার বন্ধু রাশেদ নিয়ে পাঠচক্র করে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে জেলা শহরের আরকে স্টেট উচ্চবিদ্যালয় পাঠাগারে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা আমার বন্ধু রাশেদ উপন্যাসটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয়। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিশোরদের বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের কাহিনি নিয়ে রচিত। ২০১১ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। আমার বন্ধু রাশেদ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসেবে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। চলচ্চিত্রটি তিনটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বন্ধুরা উপন্যাসটি পর্যায়ক্রমে পাঠ করেন। পরে এটির পটভূমি, চরিত্র ও মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শিহাব বলেন, আমার বন্ধু রাশেদ উপন্যাসটির পটভূমি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মফস্সলের ছোট্ট একটা শহর। চরিত্রগুলো কয়েকজন স্কুলছাত্রকে কেন্দ্র করে। মূল চরিত্র রাশেদ। তবে তার নাম আসলে রাশেদ নয়। স্কুলের শিক্ষক তার ছাত্রদের মাধ্যমে রাশেদকে নামটি দিয়েছিলেন।
তখন দেশ উত্তাল! মুক্তিযুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই ছোট্ট শহরেও তারা এসে হাজির হয়। রাশেদের বন্ধুরা কেউ জানত না, মুক্তিযুদ্ধ কী? রাশেদ বোঝায় তাদের। একপর্যায়ে মুক্তিবাহিনীকে নানাভাবে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে রাশেদসহ কয়েকজন বন্ধু। তারা উদ্ধার করে বন্দী এক মুক্তিযোদ্ধাকে। যুদ্ধের ডামাডোলে রাশেদ ও তার বন্ধুরা একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশেদ আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব বন্ধু আবার এক হয়। জানতে পারে রাশেদ আর বেঁচে নেই, রাজাকারের গুলিতে শহীদ হয়েছে। কিন্তু রাশেদের স্মৃতি বন্ধুদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে অনেক অনেক দিন। বড় হয়ে যাওয়ার পরও।
স্বাধীনতার অনেক বছর পর রাশেদের বন্ধু ইবু তার ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে আসে কিশোরবেলার স্মৃতিমাখা সেই স্থানে। তখন মনে পড়ে রাশেদকে। এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি গল্পে ফুটে উঠেছিল একদল কিশোরের বন্ধুত্ব।
প্রথম আলো ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি মজিবর রহমান খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অনেক শিশু-কিশোর প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু কষ্টের বিষয়, আজ শিশুদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুব একটা নজরে পড়ে না। শিশুমনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে উপন্যাসটি ভূমিকা পালন করবে।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফেরদৌস বেগম, ডা. শুভেন্দু কুমার দেবনাথ, আরকে স্টেট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম, বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সিয়ামুর রশিদ, প্রচার সম্পাদক এস এম আলিফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মিথিলা আক্তার, স্বাস্থ্য ক্রীড়া সম্পাদক এম মারুফ হাসান, বন্ধু মাহফুজা মারিয়াসহ অন্য বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা