‘হয় জয়, না হয় মৃত্যু’ স্লোগানে আবর্তিত ‘সংশপ্তক’

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

শহীদুল্লা কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস ‘সংশপ্তক’ একটি শক্তিশালী ও সমাজসচেতন সাহিত্যকর্ম। এতে পূর্ববঙ্গের নিটোল গ্রামীণ জীবন থেকে শুরু করে কলকাতা ও ঢাকার শহুরে পটভূমিতে জাতি বিভাজন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ পরস্পরের সঙ্গে সূক্ষ্মভাবে জড়িত। উপন্যাসটি একটি বৃহৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সাহিত্যময় দলিল হিসেবে পাঠকের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

২ আগস্ট বিকেলে ‘সংশপ্তক’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। প্রথম আলো ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রের আসর সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।

বইটি নিয়ে বন্ধুদের আলোচনায় উঠে আসে উপন্যাসের কাহিনি ও উপজীব্য। বড় সৈয়দের মেজ ছেলে জাহেদ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, আলিগড় ও কলকাতা–ফেরত। পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত থেকে মুসলমানদের শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেন, পরে বামপন্থায় ঝোঁকেন। চাচাতো বোন রাবুকে এক বৃদ্ধ পীরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় প্রতিবাদে চাচা ও পীরের ওপর হামলা চালান। জাহেদের মামা ফেলু মিঞা ও তাঁর নায়েব রমজান জমিদারি ফেরত পেতে প্রজাদের ওপর নিপীড়ন চালান। এতে অনেক গরিব পরিবার ভিটেছাড়া হয়। উপন্যাসে শ্রেণিবৈষম্য, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সামাজিক নিপীড়নের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, নিপীড়িত হুরমতি, প্রগতিশীল নারী রাবু, সংগীতশিল্পী মালু ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী সেকান্দর মাস্টার—প্রত্যেকেই এই উপন্যাসে নিজের লড়াইয়ে সংশপ্তক হয়ে ওঠেন।

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর।

‘সংশপ্তক’ আমাদের শেখায় নির্যাতন, বৈষম্য ও বাধা পেরিয়ে কীভাবে মানুষ নিজ আদর্শে অবিচল থাকতে পারে। জাহেদ–রাবুদের সংগ্রাম আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় উল্লেখ করে সভাপতি খালিদ হাসান বলেন, ‘হয় জয়, না হয় মৃত্যু’ স্লোগানে আবর্তিত ‘সংশপ্তক’।

উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংশপ্তক’ বিগত যুগের কাহিনি। ‘সংশপ্তক’ এ যুগের দর্পণ। এ সময় তিনি বন্ধুদের বেশি বেশি বই পড়ার পাশাপাশি লেখালেখি করার জন্য উৎসাহিত করেন।

বইটি নিয়ে আরও আলোচনা করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক তাওমান জাহান, বন্ধু জেরিন জাহরা, অনিকসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা