সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহুদিন ধরে ভাড়ায় রিকশা চালান মোহাম্মদ বারেক। ক্যাম্পাসে তিনি ‘বারেক মামা’ নামে পরিচিত। ষাটোর্ধ্ব বারেক মামার দৈনিক যা আয় হয় তার একটি অংশ মালিকপক্ষকে দিতে হয়। এই স্বল্প আয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।
প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বারেক মামাকে একটি রিকশা উপহার দিয়েছে শাবিপ্রবি বন্ধুসভা। ২৫ অক্টোবর বিকেলে তাঁর হাতে রিকাশাটি হস্তান্তর করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
রিকশাচালক মোহাম্মদ বারেক জানান, প্রতিদিন রিকশা ভাড়া বাবদ ৮০ টাকা করে মালিককে দিতে হয়। এরপর রোজগারের বাকি টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালান। স্বামী, স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে ছয়জনের সংসার।
বন্ধুরা জানান, শাবিপ্রবি বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও বন্ধুদের আর্থিক সহযোগিতায় রিকশাটি কেনা হয়। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বন্ধু পরিবহন’। মোহাম্মদ বারেক জানতেন না তাঁকে রিকশা উপহার দেওয়া হবে। হঠাৎ বন্ধুসভার সদস্যরা উপহার নিয়ে ওনার কাছে পৌঁছালে তিনি খুশিতে কান্না করে দেন। জানান, এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। রিকশাটি তিনি প্রতিদিন শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে চালাবেন, এবং এর মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের ব্যয়ভার বহন করবেন।
রিকশা হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা অধ্যাপক জায়েদা শারমিন, অধ্যাপক সাহাবুল হক, প্রথম আলোর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নোমান মিয়া ও বন্ধুসভার বন্ধুরা।
এই মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করে অধ্যাপক সাহাবুল হক বলেন, ‘এই উদ্যোগ বন্ধুসভার মানবিক চেতনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটায়।’ ভবিষ্যতেও বন্ধুসভা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে এবং সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক জায়েদা শারমিন বলেন, ‘এই উদ্যোগ টেকসই সমাধানের একটি প্রতিচ্ছবি। শাবিপ্রবি বন্ধুসভার এ ধরনের কাজ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা জোগায়।’
প্রথম আলো প্রতিনিধি নোমান মিয়া বলেন, ‘শাবিপ্রবি বন্ধুসভা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে চলেছে। বন্ধুসভার এই কার্যক্রম অন্যদের জন্য অনুসরণীয়।’
শাবিপ্রবির বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুর হাসনাত বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল টেকসই সমাধান কিছু করা যায় কি না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই উদ্যোগ। আশা করি এর মাধ্যমে একটি পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে।’ তিনি জানান, বন্ধু পরিবহনের মূল পরিকল্পনা, রিকশা কেনা থেকে শুরু করে নিরলসভাবে সবকিছু করেন শাবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরা।
সভাপতি, শাবিপ্রবি বন্ধুসভা