টেক শো
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার কীভাবে শুরু করবেন
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪ জুন অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম পর্ব।
ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো আপনি আপনার কাজটা বৈশ্বিক বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। যেকোনো ধরনের সেবা দিতে পারছেন। এটার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আপনি যেকোনো দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারছেন। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গার মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা থাকে। হতে পারে কারও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত, কারও গ্রাফিকস ডিজাইনার লাগবে কিংবা কারও কোনো একটা কনটেন্ট লেখার জন্য কনটেন্ট লেখক দরকার।
ফ্রিল্যান্সের জন্য বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস আছে জানিয়ে টেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর আতিকুর রহমান বলেন, ‘মার্কেটপ্লেসগুলোতে তখন ক্লায়েন্টরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার খোঁজেন। যাঁরা সেখানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যুক্ত থাকেন, অথবা যাঁদের কাজটা দরকার, তাঁরা সেখান থেকে কাজটা পেয়ে থাকেন।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ছয় লক্ষাধিক মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করছেন। তাঁরা নিয়মিত এই জায়গাতে নিজেদের দক্ষতা বাড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের শুধু ফ্রিল্যান্সিংয়েই আটকে রাখেনি; একটা সময় ফ্রিল্যান্সিং থেকে বের হয়ে ছোট টিম গঠন করে ধীরে ধীরে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর পঞ্চম পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘হাউ টু স্টার্ট আ ক্যারিয়ার ইন ফ্রিল্যান্সিং অ্যান্ড আউটসোর্সিং’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ৪ জুন রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিজাইন মংকসের সিইও ও ফাউন্ডার এবং টেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর আতিকুর রহমান। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশে তরুণদের জন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা, আগামী দিনগুলোতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কোন কোন দক্ষতা লাগবে, গ্রামীণ অঞ্চলে যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কী কী প্রয়োজন, ফ্রিল্যান্সারদের আয় কেমন? এই পেশাকে কি ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যাবে? এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।
আতিকুর রহমান বলেন, ‘যদি কারও তীব্র ইচ্ছে ও আগ্রহ থাকে, অবশ্যই তাঁর জন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ে দারুণ সুযোগ রয়েছে। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারবেন। যাঁরা এই খাতে আসতে চান, তাঁদের ইংরেজিতে যোগাযোগ করাটা জানতে হবে বা শিখে নিতে হবে। এটা বেসিক। কারণ, ক্লায়েন্টরা সব বাইরের দেশের হয়ে থাকেন। পড়াশোনার পাশাপাশিও এই কাজটা করা যায়। কেউ ঘণ্টা হিসেবে কাজ করেন, কেউ প্রজেক্ট হিসেবে কাজ করেন। নিজের সুবিধা অনুযায়ী করতে পারবেন।’
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য যেসব দক্ষতা লাগবে
আগামী দিনগুলোতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা আরও বাড়বে। এর জন্য প্রয়োজন—
• ভিডিও এডিটিং: এটার চাহিদা আগেও ছিল এবং দিন যত যাচ্ছে, চাহিদা বাড়ছে।
• এআই: এআই সম্পর্কিত টুলসগুলো শিখতে হবে। আগামীর বিশ্ব এআইয়ের। তাই যাঁরা এআই বিষয়ে দক্ষ হবেন, তাঁদের চাহিদা তত বেশি হবে।
• ডিজিটাল মার্কেটিং: এখানে সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্টস, ওয়েবসাইটের এসইও তৈরি করা, ওভারঅল পেইড-অর্গানিক অনেকগুলো ব্যাপার থাকে। ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে যত দিন আমরা কানেক্টেড থাকব, তত দিন ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাপারটা থাকবে। এটা শিখলে ক্যারিয়ারে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।
• নো-কোড: এখন অনেক নো-কোড তৈরি করার লোক রয়েছে। এআইয়ের কারণে কাজ খুবই সহজ। এর মাধ্যমে খুব সহজেই একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। সব সময় সবার সময় হয় না, নিজে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করার। সে ক্ষেত্রে লেন্ডিং পেজ টাইপের যেসব ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়, বিশেষ করে ফ্রেমমার্কিং বা ওয়েবপ্রোতে। এগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে।
• ইউআই/ ইউএক্স: এআই দিয়েও পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ইউএক্স ডিজাইনার লাগে।
যাঁরা গ্রামীণ অঞ্চলে থাকেন, তাঁরা কীভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত হবেন
এখন সবকিছুই হাতের নাগালে। অনেকের কাছে হয়তো ল্যাপটপ নেই। তবে প্রায় সবার কাছেই স্মার্টফোন আছে। স্মার্টফোনে চ্যাটজিপিটি আছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটা সবচেয়ে বড় শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে।
আতিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং যাঁরা শিখতে চান, তাঁদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমি কোন কাজটা করতে চাই, সেটা খুঁজে বের করা। এরপর সেটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন সোর্স থেকে রিসোর্স সংগ্রহ করা। এমনকি আপনি চাইলে চ্যাটজিপিটির সহায়তাও নিতে পারেন। নিজের বিস্তারিত জানালে চ্যাটজিপিটি একটা গাইডলাইন আপনাকে দেবে। ইউটিউবেও অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়।’
ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে কাজ করেন ও আয় কেমন
ডিজাইন মংকসের সিইও ও ফাউন্ডার আতিকুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে নিজের এই কাজটা পারতে হবে। যখন মার্কেটপ্লেসে আপনার কাজের চাপ বেড়ে যাবে, তখন হয়তো আপনি অন্য কাউকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নিলেন। এ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সঙ্গে সব যোগাযোগ কিন্তু আপনিই করছেন। কেবল কাজটা অন্য কেউ করছেন। এভাবেই একটা টিম তৈরি হয়ে যায়।’
ফ্রিল্যান্সে যেকোনো ধরনের কাজের পেমেন্ট ডলারে হয়ে থাকে। ধরুন, যুক্তরাষ্ট্রের একটা লোক কোনো কাজ যদি সেখান থেকেই করিয়ে নেন, তখন যে খরচটা পড়ছে; একই কাজ যদি আপনাকে দিয়ে করিয়ে নেন, তখন তাঁর খরচ অর্ধেক কমে যাবে। অন্যদিকে আপনি কিন্তু আপনার চাহিদার চেয়ে বেশি পেমেন্ট পাচ্ছেন। কারণ, সে আপনাকে ডলারে পেমেন্ট করছে।
আতিকুর রহমান বলেন, ‘আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঠিক দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করতে পারেন, এরপরও মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনাকে একটা টপ পার্সেন্টেজের মধ্যে আসতে হবে। তলানিতে থাকলে কিছু হবে না। আপনাকে ভালো রেটিং পেতে হবে। একটা উদাহরণ দিই, আপনি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটা পোস্টে অনেক বেশি লাইক-কমেন্ট পান, তখন মেটা কর্তৃপক্ষ নিজ থেকেই পোস্টটিকে আরও বেশি বুস্ট করে। ফ্রিল্যান্সিংটাও এমন। আপনি যখন ভালো কাজ করবেন, ক্লায়েন্টরা ভালো ফিডব্যাক দেবে, তখন জিনিসটা আরও বেশি বুস্ট হবে। ধীরে ধীরে আপনার রেটও বাড়বে। এটা ধরে রাখতে পারলে ৫০ হাজার টাকা আয় করা খুবই সহজ।’
‘সুযোগের অভাব নেই। আপনার দক্ষতা থাকলে আপনি অনেক আয় করতে পারবেন। সর্বোচ্চ কত আয় করা যায়, এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই,’ যোগ করেন আতিকুর রহমান।
বন্ধুসভার বন্ধুদের জন্য পরামর্শ
আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব আছে। অনেকে হয়তো মনে করছেন, আজ অনেক কিছু শিখে ফেললাম, ভালো আত্মবিশ্বাসও তৈরি হলো। কিন্তু এক দিনে সফল হওয়া যাবে না। অনেক সময় লাগবে। নিয়মিত সময় দিতে হবে। নিজের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বাড়াতে হবে। অনেকে হয়তো ঠিকভাবে শিখছেন না, কিন্তু চাইছেন আয় বাড়াতে। তাহলে কিন্তু হবে না। অনেকে হতাশ হয়ে যান। হতাশ হওয়া যাবে না। আপনি যদি অন্তত টানা দুই মাস শেখার পেছনে সময় দেন, অনেক কিছুই শিখতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, লাইভ শোটির প্রতিটি পর্বে রয়েছে অনারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিংবা প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ টেক কুইজ। প্রতি পর্বে কুইজে অংশগ্রহণকারী ভাগ্যবান একজন বিজয়ী জেতার সুযোগ পাচ্ছেন অনার এক্সসেভেন লাইট ইয়ারবাডস। ২৮ মে অনুষ্ঠিত চতুর্থ পর্বে কুইজ বিজয়ী হয়েছেন কামরুজ্জামান নয়ন।