‘মানুষ চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারে’

সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট হাতে কৃতী শিক্ষার্থীরা
ছবি: বন্ধুসভা

‘আমি যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, আমিও যুদ্ধ করে টিকে আছি। মানুষ চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারে।’ ফরিদপুরে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে এসব কথা বলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী জসীম মাতুব্বর (২০)। জন্ম থেকে দুই হাত নেই জসীমের। পা দিয়ে লিখে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি এবং চলতি বছর এইচএসসি পাস করেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুর জেলার জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে জসীম মাতুব্বর বলেন, ‘হাঁটা শিখেছি সাত বছর বয়সে। স্কুলে প্রথম যখন যাই, অন্য সহপাঠীরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত। পড়ালেখায় আমার আগ্রহ দেখে মিজানুর রহমান নামের এক স্যার পায়ের দুই আঙুলের মধ্যে চক ঢুকিয়ে পা দিয়ে লেখা শেখান।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জসীম বলেন, ‘আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হয়ে যদি আমি পারি, আপনাদের তো আরও ভালো করার কথা। খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছি। তারপরও হাল ছেড়ে দিইনি। ক্রিকেটে বিশ্ব সুনাম আনতে পারলে শিক্ষায় কেন পিছিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।’

এরপর বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণপদ ঘোষাল, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কাজী গোলাম মোস্তাফা। তাঁদের মুখেও জসীমের প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। বিষ্ণপদ ঘোষাল বলেন, ‘এই জসীমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। শুধু কথা দিয়ে নয়, কাজে প্রমাণের মাধ্যমে।’ কাজী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘প্রথম আলোর এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের প্রেরণা জোগাবে। ভবিষ্যতে এরাই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সার্থক হবে আজকের এই শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই।’

ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে তিনটি ‘সি’র ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কালচার, কমিটমেন্ট ও কমিউনিকেশন। নিজেদের আবহমানকালের সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে এবং যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।’

প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশ সবার আগে। দেশকে তুলে ধরতে হবে। আমরা যে যে কাজই করি না কেন, তা যেন মনের আবেগ ও দরদ দিয়ে করি। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের তিনটি ‘ম’ (মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদক) থেকে দূরে থাকার শপথ পাঠ করান।

স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক পান্না বালা। উপস্থাপনা করেন ফরিদপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিপ্রা গোস্বামী। পাশাপাশি তিনি গান গেয়ে পরিবেশকে উৎসবমুখর করে রাখেন। ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশকে নাও চিনে’ দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন ফরিদপুর বন্ধুসভার প্রচার সম্পাদক শম্পা কোমল। হরবোলা (বিভিন্ন পশুপাখির ডাক অনুকরণ) পরিবেশন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর।

সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টা থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে জেলার ৬৫৭ কৃতী শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর বন্ধুসভা