রাসেলস ভাইপার, বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচিত এক নাম। যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অপপ্রচার হচ্ছে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে রাজশাহী বন্ধুসভার উদ্যোগে একটি সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ২৭ জুন বিকেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকা আক্তারের সঞ্চালনায় রাজশাহী বাতিঘরে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালমা জান্নাত উর্মি ও রমজান আলী, রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক শুভ হাসান ও সহকারী শিক্ষক নাসরিন খাতুন।
শুরুতেই মাউথ অর্গান বাজিয়ে শোনান রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধু মাঈশা মারিয়াম। সভায় ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁর বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাসেলস ভাইপার সম্পর্কিত বিভিন্ন অপপ্রচার সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার কোনো আক্রমণাত্মক সাপ নয়। সে এক জায়গায় নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পছন্দ করে। কেউ যদি তাকে আক্রমণ করে বা গায়ে পা দেয়, কেবল তখনই পাল্টা আক্রমণ করে। সে নিজ থেকে কখনো কাউকে আক্রমণ করে না। আবার রাসেলস ভাইপার সাপটি অন্যান্য সাপ থেকে একটু আলাদা। সাধারণত অন্যান্য সাপ কামড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু করে। কিন্তু রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে বিষের কোনো প্রভাব দেখা যায় না। তাই মানুষ এই বিষয়টাকে সাধারণভাবে নিয়ে এর কোনো চিকিৎসা করায় না। দুই-এক দিন পর থেকে আক্রান্ত স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে উঠতে শুরু করে এবং মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিলে শুধু অ্যান্টিভেনম দিয়েই শতভাগ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘শুধু রাসেলস ভাইপার নয়, অন্যান্য যেকোনো সাপে কামড় দিলে মানুষ সাধারণত ওঝা বা কবিরাজের কাছে ছুটে যায়। ফলে সাপে কামড়ানো অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। বর্তমানে চিকিৎসা খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন সব সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা করা হয়।’
২০১১ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ এবং সাপে কামড়ানোর চিকিৎসার জন্য লাইফ ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হয়। তখন থেকে এই মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৬৩ জন সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা নিয়েছে এবং ২৩০ জন সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়েছে। যেহেতু সাপে কামড়ানোর পর দ্রুত সময়ে চিকিৎসা নিলে নব্বই থেকে শতভাগ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই চিকিৎসকরা যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অপপ্রচার দেখে অনেক মানুষ এখন রাসেলস ভাইপার দেখলে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। এই সাপকে আক্রমণ না করলে, নিজে থেকে কখনো আক্রমণ করে না। আবার এই সাপটি পরিবেশের বাস্তুসংস্থানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাপটি সাধারণত ফসলি জমিতে বাস করে এবং জমিতে থাকা ইঁদুর বা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক অন্যান্য পোকামাকড় খেয়ে অনেক ফসল রক্ষা করে। তাই আমাদের সবার উচিত কোনো জরুরি মুহূর্ত ছাড়া সাপটিকে না মেরে নিজেদের সতর্ক হয়ে চলাচল করা এবং সাপে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া। রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি।
সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বন্ধুসভা