জীবনবোধের এক অপূর্ব আখ্যান ‘শেষের কবিতা’

পাঠচক্র শেষে মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘শেষের কবিতা’। কবিতাই এই উপন্যাসের প্রাণ। গত ৩০ জুন বইটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভা। কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়ে পাঠচক্রটি অনুষ্ঠিত হয়।

বন্ধু নাফিসা চৌধুরী বলেন, ‘মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে বলেই যে তাদের ভালোবাসার সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে, এমনটার প্রয়োজন বোধ করেনি উপন্যাসের নায়িকা লাবণ্য। অমিতের সঙ্গে তার এক হওয়ার পথে বিশেষ কোনো বাধা ছিল না। তবু লাবণ্যের মতে, একে অপরের যে বিশেষ গুণে তারা মুগ্ধ হয়েছিল, সে গুণ কখনো হারিয়ে গেলে তাদের ভালোবাসায় পরিবর্তন আসতে পারে। তার চেয়ে বরং নিজেদের প্রতি পরম শ্রদ্ধা থাকতেই আলাদা হয়ে যাওয়া ভালো, সব ধরনের সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্ত থাকুক, একে অপরের প্রতি যে অগাধ ভালোবাসা, তা বেঁচে থাকুক অন্তরে। এমনটা ভেবেই অমিতের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল লাবণ্য।

বন্ধু শেখ সানজিদা রশিদ বলেন, ‘শেষের কবিতা’ হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অনন্য প্রেমের উপন্যাস। যেখানে প্রেম শুধু আবেগ নয়, তা যুক্তি, আত্মসম্মান ও বাস্তবতার দোলাচলে দুলতে থাকা এক দার্শনিক দ্বন্দ্ব। প্রধান দুই চরিত্র অমিত রায় ও লাবণ্য দত্ত একে অপরের প্রেমে পড়লেও, শেষ পর্যন্ত তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। অমিত একজন আধুনিক, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, রোমান্টিক ও যুক্তিবাদী যুবক। অপর দিকে, লাবণ্য সংযত; বাঙালি ঐতিহ্য ও সাহিত্যচর্চায় গভীরভাবে নিমগ্ন।

এই উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একেকটি টুকরো কবিতা। প্রেম, বেদনা, আত্মমর্যাদা আর জীবনবোধ মিলেমিশে এক অপূর্ব আখ্যান সৃষ্টি করেছে।

বন্ধু অনুপ দাস বলেন, অমিত বিলেতফেরত আধুনিক যুবক, যার কথায় পাওয়া যায় তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাসের ঝলক। বিপরীতে লাবণ্য এক সংযত, সংস্কৃতিমনস্ক নারী, যার চরিত্রে রয়েছে আত্মমর্যাদার দীপ্তি ও অনুভবের গভীরতা। তাদের প্রেম একধরনের উচ্চস্তরের সংলাপ, যেখানে হৃদয় আর যুক্তি হাত ধরাধরি করে হাঁটে। তারা একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও শেষ পর্যন্ত বেছে নেয় ভিন্ন পথ। কারণ, তারা জানে, সব ভালোবাসা একসঙ্গে থাকার জন্য নয়। কিছু ভালোবাসা বিচ্ছেদের মধ্যেই পরিপূর্ণতা খুঁজে পায়।

‘শেষের কবিতা’ প্রেমের গল্প হলেও, এটি প্রচলিত প্রেমকাহিনি নয়। এটি এমন এক ভালোবাসার গল্প, যেখানে পরিপূর্ণতা আসে বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। উপন্যাসটি ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি প্রথমে ‘প্রবাসী’ নামক একটি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ) গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

পাঠচক্র সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক দেবব্রত সরকার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দপ্তর সম্পাদক শারমিন লিপি, বন্ধু সৈয়দা তামান্না ইসলাম, অভিনাশ পাল, সুজন দেব, মনোয়ার হোসেন, ছাদিকুল ইসলামসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভা