বন্ধুসভার পাঠচক্র

বিকেলের স্নিগ্ধ হাওয়ায় নদীর পাড়ে ঝালকাঠি বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে বা তারও কমবেশি সময়ে নির্ধারিত একটি বই বা নিবন্ধ কয়েকজন মিলে পৃথকভাবে পড়া এবং নির্দিষ্ট একটি দিনে সবাই মিলে সেটির ওপর নিজেদের ভালো লাগা ও মন্দ লাগা বিষয়ে আলোচনার নামই পাঠচক্র।

সহজ অর্থে আমরা বলতে পারি, কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা লেখার ওপর দলবদ্ধ আলোচনা হলো পাঠচক্র। পরিচিত দু–একজন মিলে তো আমরা কথা বলতেই পারি, কিন্তু একদল লোকের সামনে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাঠচক্রে এই বলতে না পারার জড়তা কাটানোর একটি চর্চা হয়।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, পাঠচক্রের জন্য প্রথমে একটি বই বা লেখা বাছাই করতে হবে। এরপর প্রথম কাজ হবে বইটি বা লেখাটি সবার সংগ্রহ করা এবং একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া। যে তারিখে পাঠচক্রের সব সদস্য পড়া শেষ করবেন। আরেকটি নির্দিষ্ট দিনে সবাই বইটি বা লেখাটি নিয়ে আলোচনায় বসবেন।

পাঠচক্রে একজন সঞ্চালক থাকবেন, যিনি সভা পরিচালনা করবেন। শুরুতে পাঠচক্রে যুক্ত সবাই নির্ধারিত লেখার ভালো লাগা কিছু অংশ পড়তে পারেন। তারপর শুরু হবে মূল আলোচনা। মূল আলোচনার জন্য একজন বক্তা থাকতে পারেন। আলোচনায় উপস্থিত প্রত্যেক সদস্য নিজের মতামত দেবেন। সবার মতামতে আলোচনা-সমালোচনা থাকতে পারে। এটাই হচ্ছে পাঠচক্র।

পাঠচক্রে জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পাঠচক্রের ভূমিকা অনেক। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে লেখার ওপর পাঠচক্রের আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া আগে থেকে নির্ধারিত কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে পাঠচক্র হতে পারে। তবে সবাই মিলে বসে একটি বইয়ের এক পৃষ্ঠা করে চক্রাকারে পড়া পাঠচক্র নয়। অনেক বন্ধুসভা এই ভুল করে।

একটি আসর থেকে পরবর্তী বিষয় বা বই নির্ধারণ করা যেতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে পাঠচক্রের বই ও মূল আলোচক ঠিক করে নিলে ভালো হয়। তবে সব সময় একজন মূল আলোচক থাকতে হবে, এমন নয়।

বিশ্বজ্ঞানের জগৎ গভীরভাবে জানতে আগ্রহী বন্ধুদের জন্যই বন্ধুসভার পাঠচক্র কার্যক্রম। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি,সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের সব শাখার শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন-পাঠন এই চক্রের পাঠ্যতালিকাভুক্ত।

পাঠচক্রকে প্রতিটি বন্ধুসভার ১ নম্বর অগ্রাধিকারমূলক কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই প্রতিটি বন্ধুসভা থেকে নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাবেক নির্বাহী, বন্ধুসভা