অনলাইন জুম অ্যাপের মাধ্যমে ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার এ বছরের সপ্তম পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের পাঠচক্রে আলোচ্য বই ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঠকনন্দিত উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’। কাব্যধর্মী এই বিখ্যাত উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অমর সৃষ্টি। এর ‘অমিত’ ও ‘লাবণ্য’ চরিত্র দুটি বাংলা সাহিত্যে আইকনিক চরিত্র হিসেবে পরিচিত।
বন্ধুদের সরব উপস্থিতিতে হাসি–ঠাট্টায় বরাবরের মতো এবারের পাঠচক্রটিও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছিল বন্ধুদের পর্যালোচনা।
বন্ধু জেসমিন জালাল বলেন, ১৯২৭-২৮ সাল অবধি ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অন্যতম উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’। উপন্যাসের মুখ্য বিষয় অমিত-লাবণ্যর অপরিণত প্রেমের আখ্যান হলেও বইটির ছোটখাটো চরিত্র, ছোটখাটো ঘটনাবলি কিংবা বেশ কয়েকটা উক্তি সজোরে প্রভাব ফেলে। চমৎকার ভাষাশৈলী সংযোগ ও কাব্যের সুস্পষ্ট ব্যবহার মুগ্ধ করে। মানুষের ইচ্ছা আর বাস্তবতার সঙ্গে চিরকালীন দ্বন্দ্ব এ উপন্যাসে বিদ্যমান। এটুকু বলা যায়, শেষের কবিতার কোনো শেষ নেই। শেষের কবিতা ভালোবাসার সংজ্ঞা শেখায়, তেমনি ভালোবাসাকে চির অমলিন রাখার জন্য বিরহসুরে তা জলাঞ্জলি দিতেও শেখায়।
অনিক সরকার বলেন, ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই উড়নচণ্ডী, সাহিত্যপ্রেমী ও ইউরোপীয় ধাঁচের অমিত রায়ের সঙ্গে দৈবভাবে পরিচয় হয় রক্ষণশীল, পড়ুয়া, সাহিত্যকাতর, আত্মনিমগ্ন, বাঙালি নারী সমাজের অনন্য প্রতিনিধি লাবণ্যর। পরিচয় থেকে কথা বলাবলি আর তার থেকেই প্রণয়—এভাবে লাবণ্যর মনোরাজ্যে আসীন হয় অমিত। কিন্তু তাদের দুজনের চিন্তাভাবনা প্রবাহিত হয় দুই ধারায়, মিল শুধু সাহিত্যপ্রেমেই। উপন্যাসের উৎকর্ষে আমরা দেখতে পাই, কেটকিকে অমিতের দেওয়া আংটি ফেরত দেওয়ার বেদনাদায়ক মুহূর্ত লাবণ্য চিত্তে ভাবান্তর ঘটায়। পরবর্তীকালে লাবণ্য অমিতকে অনুরোধ করে, সে যেন তার বোন ও বোনের বান্ধবীকে (কেটকি) নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসেন। অমিত রাজি হয়। আর এ ফাঁকে নিজের আত্মমর্যাদা ও সাদামাটা জীবন নিয়ে লাবণ্য স্থানান্তর হয়ে যায় নতুন জায়গায়। শেষটায় আমরা দেখতে পাই, অমিত কেটকিকে বিয়ে করে এবং লাবণ্য শোভনলালকে। অনেক সুন্দর ও ত্রিভুজ প্রেমের একটা বাস্তবধর্মী, আধুনিক উপন্যাস এটি। পাঠকমাত্রই শেষের কবিতার মায়ায় পড়বেন।
পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আফিয়া আনজুম বলেন, ‘“শেষের কবিতা”য় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কের জটিল রূপ তুলে ধরেছেন, যেখানে অমিত আর লাবণ্য চরিত্র দুটি বর্তমানের সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। উপন্যাসে অনেকগুলো কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে, যা রূপক অর্থে গভীরভাবে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরে। বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি হিসেবে ‘‘শেষের কবিতা’’ আমাদের রোমান্টিক সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা শেখায়।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নউশিন আনজুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিন উদ্দিন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নন্দিতা চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাল্গুনী ভট্টাচার্য, প্রচার সম্পাদক তন্ময় দত্ত মিশু ও সাধারণ সম্পাদক আদিত্য গোস্বামী।
প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা