সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের পুরোহিতপুর গ্রামের গৃহিণী কমলা দাস। স্বামী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। সাতক্ষীরা বন্ধুসভার উদ্যোগে কাপড় ও পাটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে এসে আক্ষেপ করে কমলা দাস বলেন, ‘সমাজে আমাদেরকে সবাই একটু নিচু ভাবে দেখে। সবার সঙ্গে ভালোভাবে মিশতেও পারি না। সরকারি বা এনজিওর কোনো প্রশিক্ষণ আমাদের দেওয়া হয় না। হাতের কাজ জানা থাকলে একটু ভালো হতো। তবে শেখাবে কে? আমরা তো আর জানি না, কারা এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়।’
একই উপজেলার মহিষাডাংগা গ্রামের ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সংসারের বাজার স্বামীরা করে থাকেন। বাজারে যাওয়ার আগে তাঁর হাতে ব্যাগ দিয়ে বলি এটা-ওটা আনতে। কিন্তু কখনোই ভাবিনি এই প্লাস্টিকের তৈরি ব্যাগ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর। আমরা গ্রামের মানুষ হওয়ায় এসব জানতাম না। বন্ধুসভার কল্যাণে এখন কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করতে পারছি। নিজের ব্যবহারের পাশাপাশি বাইরে বিক্রিও করতে পারব। পরিবারও আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।’
প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি ভালো কাজের অংশ হিসেবে চারটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের ১৩০ দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীকে কাপড় ও পাটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে সাতক্ষীরা বন্ধুসভা। ১৮ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর—সাত দিনব্যাপী চলে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের, সেলাই প্রশিক্ষক শেফালী রানী এবং পাটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষক ছিলেন চম্পা বিশ্বাস।
বন্ধুরা বলেন, ‘মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সাধ্যমতো সমাজের পিছিয়ে পড়া এই মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করছি। তাঁদের স্বাবলম্বী করতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। তাঁরা যাতে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারেন। পাশাপাশি নিজের ব্যবহারে জন্য নিজেরাই ব্যাগ তৈরি করে অর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারেন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া। পরবর্তীতে বড় কোনো বেসরকারি সংস্থা বা সরকারি সহোযোগিতা পেলে তাঁদেরকে আরও ভালো প্রশিক্ষণ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
সভাপতি, সাতক্ষীরা বন্ধুসভা