চবি বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’

চবি বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

হুমায়ূন আহমেদের অমর সৃষ্টি ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

উপন্যাসের মূল চরিত্র মতি, গ্রামের কন্যা কুসুম এবং জমিদারের দুই নাতি নিতু ও শাহানাকে নিয়ে আবর্তিত হয় কাহিনি। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে যেন গ্রামীণ প্রকৃতির গন্ধ লেগে থাকে পাঠকের মনে। মাঠ, মেঘ, নদী আর সমাজের নানা টানাপোড়েন—সবকিছু মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে এক নিঃসঙ্গ হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি।

বাংলার মাটির মানুষ, ভাটির মানুষ, গানের মানুষ, সাদাসিধে মানুষের ইতিবৃত্ত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। ভাটি অঞ্চলের একটি গ্রামে গাতক মতির বসবাস। গানই জীবন, গানের সঙ্গেই তার বসবাস। তাকে ভালোবাসে সেই গ্রামেরই গানপাগল এক খেয়ালি মেয়ে কুসুম। কুসুমের মনের ভাবনা অজানা নয় মতির। কিন্তু গাতক মতি বিশ্বাস করে, সংসারী মানুষের গলায় গান বসে না। তাই সে সংগীতের জন্য পরিত্যাগ করে সংসার।

উপন্যাসটি মূলত দুই মানব-মানবীর ভালোবাসার ট্র্যাজিক উপাখ্যান। গল্পের শুরুটা হয় সেই গ্রামের এককালের জমিদারের দুই নাতনি শাহানা আর নিতুর আগমনের মধ্য দিয়ে। পুত্রের সঙ্গে দীর্ঘ দুই যুগ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শহর থেকে আসা দুই নাতনিকে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে জমিদার সাহেব। জমিদারের নাতনিদের সঙ্গে যাত্রাপথেই দেখা হয় গাতক মতির। গান শুনেই মতির ভক্ত হয়ে ওঠে শাহানা। জমিদারের নাতনিদের আগমনী বার্তায় জেগে ওঠে গ্রাম, ওঠে খুশির রব। সত্যিকার রাজকন্যাদের দেখা পেয়ে সবাই শিহরিত!

পেশায় চিকিৎসক শাহানা সেই গ্রামের হিন্দু এক রমণীর বাচ্চা প্রসবে সহায়তা করে সবার মধ্যমণি হয়ে ওঠে। জমিদারবাড়ির প্রতি গ্রামের মানুষের ঘৃণা শাহানার কারণে রূপান্তরিত হয় ভালোবাসায়। অপর দিকে জমিদারের ছোট নাতনি নিতুর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে কুসুমের ছোট বোন পুষ্পের। মতির সঙ্গেও জমিদারের নাতনিদের ভাব জমে ওঠে, বিশেষ করে শাহানার সঙ্গে। আর সেটাই কুসুমের হৃদয়ে তোলে ঝড়। ভালোবাসার আগুনে জ্বলেপুড়ে মরে একাকার হয় কুসুম। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকা কুসুম-পুষ্পের বাবা বাড়িতে ফিরে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে উজানের এক যুবক সুরুজকে। মেয়ে কুসুমের সঙ্গে ছেলেটিকে বিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে।

কুসুম-মতির সহজ–সরল সম্পর্কের জটিলতা গল্পে অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। মতি জানে, কুসুম তাকে ভালোবাসে। মতির হৃদয়েও কি কুসুমের প্রতি ভালোবাসা জাগেনি? কুসুম যখন মতিকে তার বিয়ের কথা জানাতে যায়, মতির বুক কি কেঁপে ওঠেনি! কসুম যখন মতিকে বিয়ে করে গানের দল করার কথা বলে, তখন মতির কি একবারও ইচ্ছা হয়নি এই মেয়ের হাত ধরে আজানার পথে পাড়ি জমাতে! মতির শিল্পী হৃদয়ের কাছে প্রেমিক হৃদয় ছিল পরাজিত। নিজের শিল্পসত্তাকে হারানোর ভয়ে মতি নিজেই তার এই সত্তাকে গলা টিপে হত্যা করেছিল। তাই হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ গল্প-উপন্যাস-চলচ্চিত্রের মতোই এই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকারা ট্র্যাজিক পরিণতি বরণ করে নেয়। তবে অস্বীকার করলে চলবে না, এই পরিণতিই সার্থক করেছে উপন্যাসটিকে।

বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ নিছক প্রেমকাহিনি নয়, এটি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ। হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাস পাঠকের মনে এক দীর্ঘস্থায়ী আবেগ ছড়িয়ে দেয়, যার পরতে পরতে আছে ভালোবাসা, বিভ্রান্তি ও মানুষের অন্তর্লোকের বৃষ্টি।

বন্ধু মিথিলা দত্ত বলেন, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ হুমায়ূন আহমেদের এক অনবদ্য সৃষ্টি। লেখকের চিরচেনা সহজ ভাষা, মানবচরিত্র বিশ্লেষণের গভীরতা ও আবেগমথিত বর্ণনাশৈলী এই উপন্যাসকে বাংলা সাহিত্যে এক আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা