সাহিত্য জীবনের দর্পণ, সমাজের দর্পণ। সাহিত্যের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয় দেশ-কাল-সমাজ। সাহিত্যের যে শাখায় সবচেয়ে শিল্পিতরূপে জীবনকে ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা হলো নাটক। নাটক জীবনের দ্বন্দ্ব ও সংকটকে তুলে ধরে। তেমনি একটি হাস্যরসাত্মক নাটক বা প্রহসন হলো ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর সৃষ্টি এ প্রহসনটি। রক্ষণশীল সমাজের অন্ধকার দিকটি উন্মোচিত করার মাধ্যমে ধর্মপরায়ণের আড়ালে ব্যক্তির নীচতাকে সামনে এনেছেন। উঠিয়ে এনেছেন জমিদার বা ভূস্বামীদের অত্যাচার নির্যাতনের কথা। গ্রামীণ সমাজের জমিদারদের দৌরাত্ম্য আর নারীলোলুপতার কথা। বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মরণে ১৩ মে তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নিয়ে পাঠচক্র করেছে যশোর বন্ধুসভা। এদিন বিকেলে জেলা শহরের পৌর পার্কের সবুজ চত্বরে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
পাঠচক্রে সমকালীন প্রেক্ষাপটে নাটকটির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন বক্তারা। পাঠচক্র সম্পাদক বিপ্লব অধিকারীর সঞ্চালনায় বন্ধু মনিরা খাতুন প্রহসনটি নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাদ মাইকেল মধুসূদন দত্তকে পাশ্চাত্য ভাবধারায় প্রভাবিত কবি বলে উল্লেখ করেন এবং বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রহসনটিতে সমাজের বোধোদয় ঘটানোর জন্য যেমনভাবে জমিদারদের দৌরাত্ম্য দেখানো হয়েছে, তেমনি তুলে আনা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতির প্রসঙ্গও। সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রেজা বলেন, পাশ্চাত্য নাট্যরুচিকে উপমহাদেশে পরিচয় করাতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রহসন বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।
এ ছাড়াও প্রহসনটির বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধুরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার, খন্দকার রুবাইয়া, হামিদা হিমু, জাহানারা জ্যোতিসহ অন্য বন্ধুরা। প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে কেন ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ–এর মতো সাহিত্যকর্ম লেখা হচ্ছে না, সেটা ভেবে দেখা সময়ের দাবি। এ ছাড়া তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে সম্যক আলোচনা করেন।
আলোচনায় অংশ নেন কবি কাজি মাজেদ নেওয়াজ। তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে আধুনিক কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে কারণ দর্শান এবং তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন বই পড়ার ও লেখালেখিতে উৎসাহিত করেন।
যশোর বন্ধুসভার সভাপতি লাকি রাণী কাপুড়িয়া সভাপতির বক্তব্যে সমাজের নেতিবাচক দিকগুলো বর্জন করে ইতিবাচক দিকে ধাবিত হওয়ার আহ্বান জানান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা