জসীমউদ্‌দীনের ‘কবর’ কবিতা নিয়ে সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্র

সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: সমরজিৎ হালদার

বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ প্রতিভাবান কবি জসীমউদ্‌দীন। তাঁকে ‘পল্লিকবি’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। গ্রামীণ জীবনের সুখ–দুঃখ, বিচ্ছেদ ও মানবিক বোধের অনবদ্য চিত্র তাঁর কবিতায় সব সময় ফুটে ওঠে। জসীমউদ্‌দীন রচিত ‘কবর’ কবিতা বাংলা সাহিত্যের এক অতুলনীয় সৃষ্টি। কবি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় এ কবিতা প্রবেশিকা বাংলা সংকলনে যুক্ত করা হয়।

১৯২৫ সালে ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘কবর’ কবিতাটি প্রথমে কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত, যার চরণ সংখ্যা ১১৮। প্রকাশিত হওয়ার পর এই কবিতা পাঠকসমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

‘কবর’ কবিতায় এক বৃদ্ধ তাঁর নাতিকে তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতনির বিয়োগান্তের কথা বলতে গিয়ে দুর্বিষহ জীবনের দুঃস্বপ্নকে বর্ণনা করছেন। স্বজনহারার বেদনায় নিজের অস্তিত্বকে বহন করে বেঁচে থাকার অপরাধবোধের গ্লানি তিনি ব্যক্ত করতে চান। কবিতায় বৃদ্ধ দাদুর অতীতের স্মৃতিচারণা করলে মনে পড়ে যায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও মায়াময় সম্পর্কের কথা। চরিত্রগুলোর মৃত্যু হলেও তাদের স্মৃতি অমর হয়ে থাকে। জীবন–মৃত্যুর অনিশ্চয়তা কবিতার একটা মূল দিক। জীবন ক্ষণিকের, মৃত্যুই আসল গন্তব্য। কবিতাটিতে শুধু প্রিয়জনের জন্য শোকই নয়, ফুটে উঠেছে গ্রামীণ জীবনের বেদনা। প্রতিটি পঙ্‌ক্তি যেন আত্মার আর্তনাদ।

‘কবর’ কবিতার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে এটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। ১৬ মে বিকেলে প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠচক্রে কবিতাটি আবৃত্তি করেন বন্ধু প্রত্যাশা তালুকদার, অম্লান রায় ও যুবরাজ রায়। কবিতা আলোচনায় বন্ধু শতাব্দী দত্ত বলেন, ‘এমন মর্মস্পর্শী কবিতা আজও পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দেয়।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, সমরজিৎ হালদার, প্রণব চৌধুরী, মিনথিয়া রহমানসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা