বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্স পরিদর্শনে বন্ধুরা

বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্সের সামনে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করতে বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা। ১৪ ডিসেম্বর শীতের সকালের মিঠে আলো গায়ে মেখে বন্ধুরা নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে রওনা দেন আনোয়ারা উপজেলার বন্দর গ্রামের দিকে।

সেখানে পৌঁছে সবাই একসঙ্গে বধ্যভূমিতে প্রবেশ করেন। সুন্দর, সাজানো–গোছানো বাগানের মাঝখানে কিছু স্মৃতিস্তম্ভের কাছে খালি পায়ে হেঁটে যেতে যেতে কত কিছু যেন মনের মধ্যে ঘুরছিল, শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসছিল। চারদিকে সবুজে ঘেরা, মাঝে কিছু স্তম্ভ। মনে হচ্ছিল, চিরসবুজের ভিড়ে কড়া রোদের ছটায় আরও সবুজ হয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের কথার জানান দিচ্ছিল আশপাশের পরিবেশ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নীরবতা ভাঙেন বন্ধু ইসরাত জাহান। বন্ধু মাসুদ রানা, ইব্রাহিম তানভীর, নাদিরা, নুরুজ্জামান খান, মঈন উদ্দীন, কামরান চৌধুরী, ইকবাল হোসেন, নাজমা, ইনজামাম, সবাই একে একে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাঠ, আলোচনা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

মূল বধ্যভূমিটিতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতার অভাব। বধ্যভূমির যত্নে প্রশাসনের দায়িত্বের ঘাটতি রয়েছে। বন্ধুরা ভবিষ্যতে বধ্যভূমি পরিষ্কার রাখতে ও যত্ন নিতে উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সভাপতি ইব্রাহিম তানভীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্ধুসভা শুধু দিবসগুলো পালনই করে না, চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করতে। আমরা আগামী দিনগুলোয় বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করব।’

বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্স
ছবি: বন্ধুসভা

সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা এ রকম আরও নতুন নতুন বধ্যভূমির সন্ধান করব। বাংলাদেশকে, মুক্তিযুদ্ধকে আরও জানব।’

বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্স ১৫৬ শহীদের স্মৃতিকে বহন করে। ১৯৭১ সালের ২০ মে ভোররাত ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আনোয়ারা উপজেলার বন্দর গ্রামের বধ্যভূমিতে ১৫৬ জন নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বিশেষ স্মৃতি কমপ্লেক্স, যা আমাদের ইতিহাস ও স্বাধীনতার সংগ্রামকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেবে। এ স্মৃতি কমপ্লেক্সের বৈশিষ্ট্য হলো স্মৃতিস্তম্ভ–সংবলিত সীমানাপ্রাচীর, এমএসজি অস্ত্রের আদলে তৈরি মূল ফটক, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছরের ত্যাগের প্রতীক স্তম্ভ, ৯টি স্তম্ভ (৮টি কালো শোকের প্রতীক, ১টি সাদা শান্তির প্রতীক), নির্মাণাধীন সেমিনার কক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার গ্রন্থাগার ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। বধ্যভূমিটি সম্পর্কে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছেন বন্ধু মঈন উদ্দীন।

স্বাধীনতা লাভের জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের উজ্জ্বল ইতিহাস সারা জীবন বুকে ধারণ করবে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম, এই আশা ব্যক্ত করেন বন্ধুরা।

আগে বধ্যভূমিটিতে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করা হলেও এবার দেখা যায়নি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে কারও কোনো পদচিহ্ন, কোনো শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা ফুলের তোড়াও। সেদিন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরাই প্রথম শ্রদ্ধা জানাতে যান।

পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা