রাব্বীর পরিবারের পাশে বন্ধুসভা

বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাব্বীর বাবা মিন্টু শেখ
ছবি: বন্ধুসভা

অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ ও সংসারের চাহিদা মেটাতে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠা শিশু রাব্বী শেখ পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাবার পুরোনো রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ২৪ মার্চ ‘সংসার চালাতে বই-খাতা ছেড়ে বাবার রিকশার হাতল ধরেছে শিশু রাব্বী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গোয়ালন্দ বন্ধুসভার বন্ধুরা এগিয়ে আসেন। সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা।

প্রথম আলো অনলাইনে ১৫ এপ্রিল ‘রিকশাচালক শিশু রাব্বীর পরিবারের পাশে দাঁড়াল গোয়ালন্দ বন্ধুসভা’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের নজরে এলে রাব্বীর পড়াশোনার পাশাপাশি বাবা মিন্টু শেখের চিকিৎসার খরচ বহনের ব্যবস্থা করে। পরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ফকীর ডাঙ্গায় রাব্বীদের বাড়িতে প্রথম আলোর গোয়ালন্দ প্রতিনিধি রাশেদুল হকসহ বন্ধুসভার বন্ধুরা খোঁজ নিতে যান। পাশাপাশি মিন্টু শেখের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

পরে ২৫ মে ফরিদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মিন্টু শেখের আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে করাসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। চিকিৎসক পার্থপ্রতিম কর্মকার জানান, রোগীর পেটে আলসারের সমস্যাসহ ফুসফুস বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য তাঁর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চালাতে হবে। পরে যাবতীয় ওষুধপত্রসহ নৈশভোজ শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টু শেখকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ সময় প্রথম আলোর প্রতিনিধি ছাড়াও সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাসরীন আক্তার, গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সফিক মণ্ডল ও বন্ধু আদ্রিতা রায়হান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ১৯ মে শিশু রাব্বীর বাড়িতে খোঁজ নিতে যায় প্রথম আলোর প্রতিনিধিসহ বন্ধুসভার একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় বন্ধুসভার বন্ধু ও পোশাক ব্যবসায়ী সোহেল রানা শিশু রাব্বীর হাতে অর্থসহায়তা প্রদান করেন। উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সহসভাপতি এস এম শামসুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক মৃধা, কলেজপড়ুয়া ফকীর জাকির হোসেনসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা। রাব্বীর বাবা মিন্টু শেখ, মা জোছনা খাতুন, দাদি, রাব্বীর বড় বোন ও ছোট ভাইও উপস্থিত ছিল।

প্রতিবেশী এরশাদ সরদার বলেন, ‘রাব্বীর পরিবার অনেক অসহায়। অথচ তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো তেমন কেউ ছিল না। আল্লাহই আপনাদের সঙ্গে ওর দেখা করিয়ে দিয়েছে। তা না হলে হয়তো আজ এ ব্যবস্থা হতো না। প্রথম আলোর জন্য প্রাণভরে দোয়া করি।’

মিন্টু শেখ বলেন, ‘কখনোই ভাবিনি আমাদের জন্য আপনারা এত কিছু করবেন। ঈদের আগে আপনাদের টাকা দিয়ে ওষুধ, সন্তানদের পোশাক কিনেছি। রিকশাটি বেশি পুরোনো হওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে মেরামত করে চালিয়ে রাব্বী যা রোজগার করে, তা দিয়ে সংসার খরচ চলে। চিকিৎসা আর এনজিওর টাকা পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। সেই মুহূর্তে প্রথম আলো ও বন্ধুসভা এগিয়ে এসেছে।’

গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সফিক মণ্ডল বলেন, ‘শিশু রাব্বী ও তার পরিবারের পাশে আমরা আছি।