জহির রায়হানের বিখ্যাত উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’ নিয়ে পাঠচক্র করেছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যানে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতেই সভাপতি খালিদ হাসান পাঠচক্রের সমগ্রিক ধারণা দেন। এরপর শুরু হয় নির্ধারিত বই নিয়ে আলোচনা। এতে অংশ নেন বন্ধু আল ইমরান, মোহাম্মদ রাফি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমন মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা।
বইটি মূলত একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। সামান্য বেতনের কেরানির চাকরি করা হাসমত আলী এবং তাঁর স্ত্রী সালেহা বিবির ঘরে পাঁচটি সন্তান ও তাঁদের জীবনসংগ্রামের চিত্র।
বন্ধুদের আলোচনায় উঠে আসে, ‘বরফ গলা নদী’ নিম্নমধ্যবিত্ত অসচ্ছল একটি পরিবারের আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, ঘাত-প্রতিঘাতময় জীবনসংগ্রামের গল্প। জহির রায়হান এই উপন্যাসে অতি সাধারণ একটি পরিবারের স্বপ্নবুনন, সংসারের টানাপোড়েন, জীবন ও জীবিকার চরম বাস্তবিক গল্প অসাধারণ শব্দের ছোঁয়ায় ও বাক্যবিন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন।
পরিবারের বড় সন্তান মাহমুদ। শিক্ষিত হলেও সামান্য বেতনে চাকরি করে। কিন্তু তাতে সংসারের অভাব-অনটন দূর হয় না। তীব্র ক্ষোভ কাজ করে বড়লোকদের প্রতি। দারিদ্র্যের কশাঘাতে, জীবনের প্রতিকূলতায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে সে। ধীরে ধীরে পারিবারিক বন্ধনগুলো ঠুনকো মনে হয় তার কাছে।
সমাপনী বক্তব্যে খালিদ হাসান বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটের তুলনা করে বলেন, ‘নিম্নমধ্যবিত্তের জীবন আসলেই বরফ গলা নদীর মতো।’ তিনি উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, লেখক হাসমত আলীর পরিবারের নিদারুণ কাহিনির মাধ্যমেই উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা খুঁজেছেন।
আলোচনায় আরও উঠে আসে, পৃথিবী তার আপন গতিতে চলতে থাকে, কখনো কারও জন্য থেমে থাকে না। যাদের ছাড়া আমরা একসময় আমাদের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারি না, একসময় সেই মানুষগুলোর অনুপস্থিতিতে ঠিকই বেঁচে থাকতে শিখি। ক্ষণে ক্ষণেই হয়তো তাদের স্মরণে মনটা ব্যথিত হয়, কিন্তু জীবন স্থবির হয়ে থাকে না। ঠিকই আমরা আবার স্বপ্ন দেখি, বেঁচে থাকি বুকভরা আশা নিয়ে। উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য একটি উদ্ধৃতি হলো—অতীত। বর্তমান। ভবিষ্যৎ। ছুরি দিয়ে কেটে কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে। হাসি আছে, অশ্রু আছে। অতীতের মতো বর্তমানও যেন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ওঠা আর পড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা কেউ বলতে পারে না।
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক রাবিয়াতুল বুশরা, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুস সালেহীন, প্রচার সম্পাদক হিমেল মাহমুদ, বইমেলা সম্পাদক জনি মিয়া, ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক তাওমান জাহান, ম্যাগাজিন সম্পাদক মুনমুন আহম্মেদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ফারহান ফুয়াদ, বন্ধু তানিয়া রাফা প্রমুখ।
সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা