ডিজিটাল উদ্যোক্তা: আইডিয়াকে ব্যবসায় রূপ দেওয়া

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২১ মে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় পর্ব।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

এআই শেখার ক্ষেত্রে মূল ভিত্তিটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা কখনো পরিবর্তন হয় না। যেমন মানুষ একটা সময় বনজঙ্গলে বাস করত। তারপর চিন্তা করল, একটা ঘর লাগবে, মাথার ওপর ছাদ লাগবে, বিদ্যুৎ লাগবে, কৃষিকাজ করা লাগবে। এটাই কিন্তু ভিত্তি। তার পর থেকে কেবল এসবের আপডেট হয়েছে, ভিত্তি কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। শস্য উৎপাদনে প্রযুক্তি এলেও মূল পদ্ধতি এত বেশি পরিবর্তন হয়নি।

তাই এআই টুলস শেখার আগে ভিত্তি শেখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এআই প্রশিক্ষক সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজটা করছি, সেটা সঠিক পদ্ধতিতে করছি কি না। যেমন আপনি এআইকে বললেন একজন ব্যক্তির ছবি বানিয়ে দিতে। এআই তার নিজের মতো করে একটা বানিয়ে দেবে। তার মানে এআই তার পছন্দ আপনার ওপর চাপিয়ে দিল। তাই আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে আপনি এআইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ভিত্তি জানলে এআই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর তৃতীয় পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘ডিজিটাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ: টার্নিং আইডিয়াস ইনটু বিজনেস’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২১ মে রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আলোচক হিসেবে ছিলেন লার্নিং বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও সিইও সাব্বির আহমেদ। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান বা স্টার্টআপ করতে চান তাঁদের জন্য পরামর্শ, কী কী দক্ষতা প্রয়োজন, ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য এআইয়ের হুমকি ও সুযোগ, ব্যবসা শুরু করার পর ব্যর্থ হলে কী করণীয়, এবং অনলাইনে উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপ শুরু করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসসহ বিভিন্ন দিক। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।

এআইয়ের হুমকি নিয়ে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘হুমকিটা হচ্ছে, যখন মনে হয় আমি একটা টুলস শিখতে পারছি না, কিন্তু অন্য একজন সেটা শিখে ফেলল। কেউ কিন্তু বসে নেই। তারা টুলসে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে কাজে লাগাবে। তাই বলব, এআই টুলস যত দ্রুত আসছে, সেটা শিখে ব্যবহার করাটা যেমন চ্যালেঞ্জিং; আপনি আপনার সেক্টরে কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন, সেটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। এত বেশি এআই টুলস চলে আসছে যে আপনি কোনটা ছেড়ে কোনটা শিখবেন এবং কাজে লাগাবেন, এটাও কিন্তু চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (তৃতীয় পর্ব)।

যাঁরা নতুন স্টার্টআপ করতে চান তাঁদের উদ্দেশে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘প্রথমে চিন্তা করতে হবে আপনি এমন কিছু দিচ্ছেন কি না, যেটার জন্য একটা ভ্যালু তৈরি হচ্ছে এবং ভ্যালুটার জন্য আপনি একটা পেমেন্ট পাচ্ছেন। আর যে ব্যক্তি পণ্য বা সেবা নিচ্ছে, সেও খুশি হচ্ছে। তাহলেই আপনি সফল হতে পারবেন। তা ছাড়া আপনি যখন চাকরি করবেন, তখন ৯-৫টা চাকরি করার জন্য মাস শেষে একটা পেমেন্ট পাচ্ছেন। কিন্তু যখন উদ্যোক্তা হবেন, তখন আপনি একা কাজ করার জন্য পেমেন্ট পাবেন না। আর যদি একা কাজ করার জন্য পেমেন্ট পান, সেটা কিন্তু ব্যবসা হলো না। সেটাকে বলে ফ্রিল্যান্সিং। ব্যবসা হলো, আপনি একা না, বরং আরও অনেককে নিয়ে একটা ভ্যালু তৈরি করছেন। তখন আপনি সময়ও পাচ্ছেন অনেক। যখন মনে করবেন আপনি ৮ ঘণ্টার মধ্যে আর বাঁধা থাকতে চাচ্ছেন না, সময়টা আরও বাড়াতে চান, নিজের পছন্দমতো কিছু করতে চান, তখনই আসলে আপনার ব্যবসা শুরু করা উচিত।’

এ ক্ষেত্রে আর কী কী দক্ষতার প্রয়োজন? সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কমার্শিয়ালাইজ করার দক্ষতা থাকতে হবে। কমার্শিয়ালাইজ হচ্ছে, আপনি সিভিতে যেসব দক্ষতার কথা উল্লেখ করছেন, সেগুলো কেবল পারলেই হবে না, এই দক্ষতাগুলোকে বিক্রি করতে পারছেন কি না। এ জন্য আপনাকে মার্কেটিং শিখতে হবে, ভালো যোগাযোগ করা শিখতে হবে।’

ব্যবসা শুরু করার পর অনেকে ব্যর্থ হন। এ ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন সাব্বির আহমেদ। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর চাকরি করার পর ব্যবসা শুরু করি। সেখানে টিম হিসেবে কাজ করা কিংবা কারও বস হিসেবে কাজ করাটা আমার দক্ষতা ছিল। যখন ব্যবসা শুরু করলাম, প্রথম এক-দেড় বছর খুব ভালো গেছে। যখন টিম মেম্বারদের সংখ্যা ৩০-৪০ জন হয়ে যায়, তখন সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। কখনো এত বড় টিম নিয়ে কাজ করিনি। কীভাবে এত বড় টিম চালাতে হয়, জানতাম না। বিদেশি বিনিয়োগ ছিল, আইটি টিম ছিল—এত এত চাপ নেওয়া। পরে দেখলাম সঠিক কাগজপত্রও নেই। সেটা লাগবে। কোনো কাজ করতে গেলে সঠিক কাগজপত্র থাকাটা জরুরি।’

‘আবার একটা কথা আছে, বেশি কিছু জানলে আপনি কিন্তু অনেক উদ্যোগ নেবেন না। এখন যদি আমি জানতাম যে ব্যবসা করতে গেলে অনেক কিছু জানা দরকার, অর্থনৈতিক ব্যাকআপ থাকা দরকার, আমি কিন্তু ব্যবসাটা হয়তো করতাম না। এখন মনে হয়, তখন আরও রিসোর্স নিয়ে আগানো দরকার ছিল। তবু বর্তমানে ভালোই চলছে।’

ডিজিটাল উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপ শুরু করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এক. পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট থাকলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা অনেক সহজ হয়ে যায়। খোলার পর আপনি যদি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নেন, তখন এর মাধ্যমে অনেক এআই টুলস, পেইড সাবস্ক্রিপশন ফ্রিতে ট্রায়ালে নিতে পারবেন, এবং ফেসবুকে অ্যাড দেওয়ার বিষয়টা—এসব কিন্তু আপনি করতে পারবেন। তাই বলব উদ্যোক্তা হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে একটা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নেওয়া দরকার, এবং এর জন্য পাসপোর্ট লাগবে।

দুই. ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। উদ্যোক্তা হতে চাইলে এটা সবার আগে করে নেওয়া ভালো। ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার পরপরই একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন। এই অ্যাকাউন্টে যদি নিয়মিত লেনদেন হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে ব্যাংকও আপনাকে ভালো সুবিধা দেবে। তিন. পেমেন্ট গেটওয়ে লাগবে।

উল্লেখ্য, লাইভ শোটির প্রতিটি পর্বে রয়েছে অনারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিংবা প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ টেক কুইজ। প্রতি পর্বে কুইজে অংশগ্রহণকারী ভাগ্যবান একজন বিজয়ী জেতার সুযোগ পাচ্ছেন অনার এক্সসেভেন লাইট ইয়ারবাডস। ১৪ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্বে কুইজ বিজয়ী হয়েছেন তানজিল মাহমুদ।