‘পাতলা চাদ্দরে শীত মানে না। কম্বলটা পাইয়া অনেক উপকার হইছে। রাইতে আরামে ঘুম দিতে পারমু। তোমরা যারা এই কাজ করতেছ, তোমরারে আল্লায় শান্তি দেক।’ কম্বল পেয়ে নিজের অনুভূতি এভাবেই বর্ণনা করছিলেন ভৈরব বাজার লঞ্চঘাটের গৃহহীন বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব সাহারা খাতুন।
কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতে কাঁপছে পুরো দেশ। ২৪ জানুয়ারি ভৈরব পৌর শহর ও আশপাশের এলাকায় ৫০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করে ভৈরব বন্ধুসভা। পৌর শহরের ভৈরব রেলওয়ে জংশন, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ডসহ আশপাশের রাস্তাগুলো ঘুরে ঘুরে তীব্র শীতে জর্জরিত অসহায় মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুরা।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক শাহরিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ভাবনায় ছিল সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে কী কী কাজ করব। উষ্ণতা ছড়ানোর এই কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে।’
কম্বল পেয়ে ষাটোর্ধ্ব রেবেকা বেগম বলেন, ‘ঘরে যা আছে, তাই দিয়ে শীত মানে না। আরেকটা পাইয়া সুবিধা হইল।’
মিলশ্রমিক ৪০ বছর বয়সী মাহমুদি বেগম অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই শয্যাশায়ী। বন্ধুরা যখন কম্বল নিয়ে তাঁর গায়ে জড়িয়ে দেন, তখন আনন্দে অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, ‘আমি তোমরারে চিনি। প্রতিবছর নতুন জামা দাও, ঈদের আগে বাজার করে দাও, আর এহন আইছ কম্বল লইয়া। বাজানেরা, আল্লা তোমরারে বাঁচাক।’
সভাপতি প্রিয়াংকা বলেন, ‘মানুষের জন্য যদি কাজই না করতে পারি, তাহলে মানুষ হয়ে জন্মালাম কেন? ভৈরব বন্ধুসভার মাধ্যমে দীর্ঘ সাত বছর ধরে মানবিক উদ্যোগের কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছি। আমরা প্রতিবছর সহমর্মিতার ঈদে নতুন জামা দিই, খাবার দিই, প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভালো কাজ করি। শীতের কারণে যেখানে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে অসহায় মানুষেরা কেমন আছে, ভাবতেই মন খারাপ হতো। আর তাই উষ্ণতা ছড়ানোর এই উদ্যোগ।’
বন্ধুরা সন্ধ্যার পর থেকে কাঁধে কম্বল নিয়ে ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষদের কাছে কম্বল পৌঁছে দিয়েছেন। শীতার্ত মানুষের আনন্দের হাসিতে বন্ধুদের মন ভরে ওঠে। এ কাজে কম্বল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল।
সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বন্ধুরা মানবিক কাজে সব সময় এগিয়ে। সামনের দিনগুলোয়ও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’ আয়োজনটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা।
শীতবস্ত্র বিতরণের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা জনি আলম, সুমাইয়া হামিদ, সাবেক সভাপতি নাহিদ হোসাইন, সহসভাপতি শরীফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন, ছিদরাতুল রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, এরফান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান, অর্থ সম্পাদক নাফিস রহমান, প্রচার সম্পাদক রাসেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক জিহাদ রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক রাহিম আহমেদ, বন্ধু হিমু, সানজিদা, অনুপম, ফাহিম, অর্ণব, নিহাদ।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা