‘ধন্যবাদ শিখো এবং প্রথম আলোকে আমাদের জন্য এত সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন করায়। অনুষ্ঠানটি সাজানো ও সুশৃঙ্খল। এখানে আসতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেকদিন পর বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে একত্রিত হতে পেরে ভালো লাগছে।’ ২৮ জুন দিনাজপুর জেলায় শিখো-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করে দিনাজপুর সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুলের শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত।
দিনাজপুর শহরের কেন্দ্রবিন্দু বালুবাড়ির বন্ধন কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা, কিছুক্ষণের মধ্যে আবার বৃষ্টিও শুরু হয়। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আয়োজনকে এলোমেলো করে দেয়। তবু সব বাধা উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সকাল সাড়ে আটটা থেকে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সারিবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অভিনন্দনপত্র দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করে তাদের উপহারসামগ্রী। শিক্ষার্থীদের সবার মুখে ছিল উচ্ছ্বাস-আনন্দ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল দিনাজপুর বন্ধুসভা।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল পর্ব শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রথম আলোর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। আগামীতে তোমরা আরও ভালো কিছু কোরো এবং সফলতার শীর্ষে পৌঁছাও। সবার জন্য শুভকামনা রইল।’ সবাইকে মাদক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখো ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিখোর প্রতিনিধি শাওন রেজা বলেন, ‘তোমরা ভালো ফলাফল করেছ। তোমাদের জন্য শুভকামনা। ভবিষ্যতের ধাপগুলোতেও ভালো ফলাফল করো, এই প্রত্যাশা রাখি। মনে রাখবে, জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতা ভালো পথের সূচনা করে। তোমাদের এই সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখো। জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব তোমার নিজের। সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবন গড়ো, সফলতা আসবেই।’
অনুষ্ঠানে দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক, ফুলের শুভেচ্ছা এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত দিনাজপুর জিলা স্কুলের গুণী শিক্ষক শাহজাহান সাজু বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করলে আমাদের ভালো লাগে। তোমরা স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো। তোমাদের জন্য শুভকামনা। শুভ হোক পথচলা।’
প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী মঞ্চে এসে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দেন। মঞ্চে উঠে কথা বলতে পারার যে অভিব্যক্তি তিনি তাঁর কথার মধ্যে এর বহিঃপ্রকাশ করেন। বলেন, ‘তোমরা যারা এখানে এসেছ, তারা সত্যিই মেধাবী শিক্ষার্থী। আমার জীবনে এসএসসি পর্যন্ত কোনো দিন কোথাও কোনো মঞ্চে উঠে কথা বলতে পারিনি। এভাবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বললে জড়তা অনেকটা দূর হয়। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা। তোমাদের সবাইকে মিলে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’ এ ছাড়াও ‘মাদককে না বলুন’ স্লোগান বলে মাদক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন এবং মাদককে ‘না’ বলার শপথবাক্য পাঠ করান।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হক, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জলিল আহমেদ, ডোমার সরকারি কলেজের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস, বন্ধুসভার উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম, ডা. ডি সি রায়, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। অতিথিদের মূল্যবান আলোচনা ও বন্ধুসভার বন্ধুদের অংশগ্রহণে নাচ, গান ও আবৃত্তিতে জমে ওঠে আয়োজন। আয়োজন সফল করতে দিনাজপুর বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্বতীপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দিনাজপুর বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী সদস্য মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী, সভাপতি শুভ রায় এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিয়ানা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দীপু রায়, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক শুভজিত রায়, পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক সুম্মা মেসবাহুন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ব্রততী বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক খেয়া রাণী, প্রচার সম্পাদক অনুপ রায়, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বিপ্লব রায়, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিব ইসলাম, বন্ধু বেলালুর রহমান, সাব্বির হাসান, কৃষ্ণ বর্মন, জুঁই আফরোজ, বিথী রায়, দেবরাজ সরকার, বিরোশ রায়সহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা