‘ক্যাম্পেইন জয়িতা’ শিরোনামে ফ্রি ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্যানিং ও সচেতনতাবিষয়ক সেমিনার করেছে জাবি বন্ধুসভা। ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার রুমে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ প্রজেক্ট কন্যা এবং বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় সেমিনারে শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় নারী অংশগ্রহণ করেন। ব্রেস্ট স্ক্যানিং সেবা দেওয়া হয়েছে ৮৬ জনকে। সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ (ক্লিনিক্যাল ও রেডিয়েশন অনকোলজি) ডা. নুসরাত হক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
ডা. নুসরাত হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। নিজেকে সুস্থ রাখতে কোনো লজ্জা নয়। যেকোনো ক্যানসার নিরাময় করা সম্ভব, যদি সঠিক সময়ে ধরা পড়ে; কিন্তু আফসোস, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ নারী অবহেলা ও লজ্জার কারণে অসচেতনতাবশত ক্যানসার শেষ স্টেজে নিয়ে যান।’ তিনি ব্রেস্ট ক্যানসারের কারণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ, চিকিৎসা, ব্যয়, সচেতনতা—সবকিছুর খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলেন।
সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘লজ্জার আগে সুস্থতাকে স্থান দিতে হবে। জীবন আগে। যেকোনো ধরনের ক্যানসার হোক না কেন, কথা বলতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিয়ে নিজেরা কথা না বললে বাকিরাও বলবে না। যেই মায়েরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিন গুণ ক্যালসিয়াম লুজ করেন, সেই মায়েদের যত্ন হয়তো সন্তানেরাই নিচ্ছে না। নিজেকে ভালো রাখতে পারলে, আশপাশের সবাইকে ভালো রাখা যায়। নারীদের পিছিয়ে থাকার ফলে আজ ব্রেস্ট ক্যানসারের মতো বিষয় সামনে আসে না।’
বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের অনকোলজি বিভাগের সহকারী ম্যানেজার ইবনে চৌধুরী অর্ণব বলেন, ‘প্রতিবছর ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস অক্টোবরে আমরা ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে কাজ করে থাকি। এবার আমাদের ইচ্ছা ছিল সাভার এরিয়ায় কাজ করার। সেই উদ্দেশেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকের আয়োজন। ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতি আটজন নারীর একজনের হয়ে থাকে। দেশে চিকিৎসা ও ওষুধ থাকার পরেও নারীদের জীবনঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অথচ এখন বিভিন্নভাবে এটি নিরাময় সম্ভব। সেই লক্ষ্যে বীকন কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রজেক্ট কন্যার এক্সিকিউটিভ আরিফা সুলতানা বলেন, ‘সমাজে রোগব্যাধিতেও যেই লিঙ্গবৈষম্য আমরা দেখতে পাই, তা অচিরেই দূর হবে—এই প্রত্যাশা নিয়েই ক্যাম্পেইন জয়িতার শুরু। মায়েরা ও বোনেরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সজাগ হলেই এটি সফল হবে। এর জন্য আমরা কাজ করে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
জাবি বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া জামান বলেন, ‘ভালো কাজের আইডিয়া খুঁজতে গিয়ে মনে হয়, সাভার এরিয়ায় সবচেয়ে বেশি নারী কর্মীর বসবাস; যাঁরা পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। যাঁরা নিজের স্বাস্থ্যকে প্রতিনিয়ত অবহেলা করেন। তা ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েশিক্ষার্থীরা সচেতন থাকলেও অনেকেই অর্থের অভাবে চেকআপ করাতে পারে না বা সুযোগ পাচ্ছে না। সেই চিন্তা থেকেই আমাদের আজকের আয়োজন। আমরা চাই, যেই মেয়েরা পৃথিবীর সব শক্তির উৎস, তারা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহজাবিন প্রীতি বলেন, ‘সেমিনারে ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে বেশ গভীর আলোচনা করা হয়েছে। যা থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। স্ক্যানিংয়ের সময় ডাক্তার বেশ সময় ও ধৈর্য নিয়ে আমাদের চেকআপ করেছেন এবং ফিডব্যাক দিয়েছেন।’
স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক, জাবি বন্ধুসভা