ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনকল্যাণমুখী নয়

বগুড়া শহরের সাতমাথায় পাঠক-পেশাজীবী সম্মিলিত ঐক্য মঞ্চ, বগুড়া আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশছবি: বন্ধুসভা

সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনকল্যাণমুখী নয়। এই কালো আইন পাস হওয়ার পর থেকেই তা প্রত্যাহারের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। এই আইন ব্যবহার করে মানুষের কথা, জনগণের কথা, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কথা গণমাধ্যমকে বলতে দিতে চায় না সরকার। এ কারণেই করোনার সময় রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে এই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। যাঁরা সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা করতে চান, তাঁদের বিরুদ্ধে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।’

১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় পাঠক-পেশাজীবী সম্মিলিত ঐক্য মঞ্চ, বগুড়া আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন আমিনুল ফরিদ। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার, হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে সংহতি জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

পাঠক-পেশাজীবী সম্মিলিত ঐক্য মঞ্চ, বগুড়ার সভাপতি বজলুল করিম বাহারের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সুজন বগুড়া জেলার আহ্বায়ক হুমায়ূন ইসলাম, নিসচা বগুড়া জেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বাসদ বগুড়া জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরোপ্রধান মেহেরুল সুজন, বাপা বগুড়া জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সিফাত, বগুড়া বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।

হুমায়ূন ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোর যে সাংবাদিককে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দী করে রাখা হলো, সেই সাংবাদিক সাধারণ মানুষের মনের কথা বলেছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে আমরা জর্জরিত। আমরা এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারি? বাজারে গেলে সামর্থ্য অনুযায়ী বাজার করতে পারি না। দিন আনে দিন খায়, তাদের কথা কি সরকার কখনো ভেবে দেখেছে?’

হুমায়ূন ইসলাম আরও বলেন, ‘সাংবাদিকেরা সমাজের দর্পণ, তাঁরা আছেন বলেই আমরা সত্য কথাটা জানতে পারি। তাঁরা মানুষের কথা বলেন। তাঁদের কারণেই কিছুটা হলেও আইনের শাসন টিকে আছে। একটি মহল সাহসী সাংবাদিকতা যাঁরা করেন, তাঁদের পিছু লেগেছে, প্রমাণ করতে চেয়েছে, তাঁরা সংবাদ পরিবেশন করে অপরাধ করছেন।’

বাসদ বগুড়া জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তুলে বলেন, জনগণের ওপর অন্যায় দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়ার জন্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর এই কালো আইন পাস করা হয়েছে। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এই আইন মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে নয়। সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না। আইনের কোনো অপব্যবহার হবে না। অথচ সরকারের বিরুদ্ধে যখন কারও মত যায়, তখন এই আইনে গ্রেপ্তার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।

সাংবাদিক মেহেরুল সুজন তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রথম আলো জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে অন্য এক উচ্চতায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তারা এ দেশের গণমাধ্যমের জন্য অনন্য এক উদাহরণ। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ নতুন নয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও আরও একবার প্রথম আলোর ওপর বড় একটি আঘাত এসেছিল। এখন যেমন প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ, সেই সময় ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটোই খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এই দুই স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে যে কাউকে ওপর থেকে টেনে নিচে নামানো সম্ভব। প্রথম আলোর কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চলছে। গণমাধ্যমকর্মীরা সতর্ক না হলে এই আঘাত অন্যদের ওপরও নেমে আসবে। কারণ, স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করতে, গণমাধ্যমকে ঘায়েল করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। এই আইন বাতিল ছাড়া সুসাংবাদিকতা সম্ভব নয়।

কবি ও সাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার বলেন, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা করতে পারেন। কিন্তু এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং রাতের অন্ধকারে সেই পত্রিকার একজন সাংবাদিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা দেশে আইনের শাসনের পরিপন্থী। বাক্‌স্বাধীনতা হরণের জন্য পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বগুড়া বন্ধুসভা