বিতর্ক মানুষের চিন্তাচেতনা ও বুদ্ধিকে শাণিত করে

ফরিদপুর আঞ্চলিক পর্বে বিতর্ক উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা
ছবি: বন্ধুসভা

‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’—প্রতিপাদ্যে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত হলো পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব ২০২৩। ১৪ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুর শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।

শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিতর্ক মানুষের চিন্তাচেতনা ও বুদ্ধিকে শাণিত করে। নিজেকে চেনার জন্য, নিজেকে আবিষ্কারের জন্য বিতর্কের বিকল্প নেই। বিতর্ক মানে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা নয়। বিতর্ক হচ্ছে যুক্তিনির্ভর তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্যের সন্ধান করা।’

স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার বন্ধু জাহিদুজ্জামান খান। মাদক ও মুঠোফোনের কুফল সম্পর্কে বক্তব্য দেন মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিকবিষয়ক পরামর্শদাতা রিসালাতুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর বয়সের আগে থেকেই শিশুদের শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে। এসব পরিবর্তন উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করা যাবে না। ওই সময়টায় পারিবারিক শাসন বা শিক্ষকদের শাসন ভালো লাগে না। খুব ভালো লাগে না থেকেই জন্ম হয় নানা আসক্তির। কোনো কাজের সময় মুঠোফোন ধরা যাবে না। মুঠোফোন কাজের মনোযোগ নষ্ট করে। গবেষণা বলে, একবার মনোযোগ নষ্ট হলে তা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় লাগে।’

বিতর্ক বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিতর্ক করে আমাদের সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমাজের ভালো মানুষ হতে গেলে যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠন করতে হবে। অন্যের অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং চিন্তাভাবনা এবং বোধের বিচার করে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করা হচ্ছে বিতর্ক।’

কুইজ প্রতিযোগিতা
ছবি: বন্ধুসভা

আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিতর্ক একটি সমুদ্রের মতো। যে সমুদ্র থেকে মণি-মুক্তা সংগ্রহ করে নিতে হয়। এ কাজে তরুণ সমাজ পারদর্শী হলেই সমাজ বিনির্মাণ সহজ হবে।’

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা বলেন, ‘বিতর্ক হচ্ছে যুক্তির মেলা। একজন বিতার্কিকের কাজ হচ্ছে আগের বক্তার ভুলভ্রান্তি ও অসামঞ্জস্য তুলে ধরে যুক্তি প্রতিষ্ঠা করা। বিতর্ক একজন ব্যক্তিকে যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিতর্ক অন্তর্মুখী মানুষকে বহির্মুখী করে তুলে, যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে এবং সমাজে যুক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করে।’

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক চৈতন্য চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস আলী, প্রভাষক তন্ময় সরকার, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ময়েজ উদ্দিন সরকারি গণ গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক সাজু আহমেদ এবং ভাঙ্গা মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক অজয় দাস।

বিতর্ক উৎসবে ফরিদপুর জেলার ১৫টি বিদ্যালয় অংশ নেয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফরিদপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানার্সআপ হয় ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। সনাতনী বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাফিয়া ফারহানা, ইশরাত আরা, মেহেরীন হাসান ও রাফিত হাসান। বারোয়ারি বিতর্কে বিজয়ী হয় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তামিলি বিনতে সম্রাট। নিম্ন মাধ্যমিক পর্বে কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ইমি ভূঁইয়া, দ্বিতীয় ফরিদপুর আদর্শ বিদ্যালয়ের মিমা রহমান খান এবং তৃতীয় হয়েছে পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কায়েস বিন নূর। মাধ্যমিক পর্বে প্রথম ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মেহেরাব হোসেন, দ্বিতীয় ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সানজিদা কারিম এবং তৃতীয় হয় ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রজ্ঞা পারমিতা মণ্ডল। উৎসবে সার্বিক সহযোগিতা করেন ফরিদপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা।

সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর বন্ধুসভা