‘হিড় হিড় করে ঠান্ডা বাতাস করোছে। জারের (শীতে) চোটত হাত-পা ব্যাঁকা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। গাওত দ্যাওয়ার মতো ত্যামন মোটা কাপড়ও নাই যে অ্যানা গাওত দিয়ে উশম লিমু। তোমাগের এই কম্বলখানা দিয়ে ক্যানক্যানা (কনকনে) জারত থ্যাকে অ্যানা রক্ষা পামুনি।’
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বুধুরিয়াপাড়া মিশন স্কুল মাঠে বিতরণ করা কম্বল নিতে এসে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন গোবিন্দপুর গ্রামের সনোবালা উড়াও (৭০)। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তঘেঁষা নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের ২০০ জন দুস্থ ও অসহায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে আজ শনিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করেছে নওগাঁ বন্ধুসভা।
এর আগে বন্ধুসভার বন্ধুরা চন্দননগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বুধুরিয়াপাড়া, লক্ষ্মীডাংগা ও বিষ্ণুপুর খরপা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন। আজ বেলা ১১টা থেকে বুধুরিয়াপাড়া মিশন স্কুল মাঠে ওই চার গ্রামের তালিকাভুক্ত মানুষ আসতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই মাঠে ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
ওখনি বেওয়ার বয়স ৭০ বছর। ঠিকমতো চলতে পারেন না। চোখেও কম দেখেন। বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে বুধুরিয়াপাড়া মিশন স্কুল মাঠে কম্বল নিতে এসে তিনি বলেন, ‘এ বছর খুউব জার পড়িছে। গরম কাপড় নাই। রাতের বেলা ঘরের ভেতরে হিড় হিড় করে বাতাস ঢোকে। দুই তিনটা ক্যাতা গাওত দিয়েও রাতের ব্যালা ঘুমাতে পারো না। তোমাগের কম্বলখানা প্যায়ে অ্যাকনা আরাম করে ঘুমাতে পারমু।’
লক্ষ্মীডাংগা গ্রামের কানু পাহান (৫৫) বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার নাম হামরা কোনো দিন শুনিনি। ম্যালা দূরত থ্যাকে ওরা হামাগের দ্যাওয়ার জন্য কম্বল লিয়ে আসিছে। এত দিন ছিঁড়া ক্যাতা আর চাদর গাওত দিয়ে জারত খুব কষ্ট পাছিলাম। এখন এটা গাওত দিয়ে অ্যানা উশম পামু।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বন্ধুসভার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান আনছারী, চন্দনগর কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর প্রতিনিধি ওমর ফারুক, নওগাঁ বন্ধুসভার সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুরছালিন ইসলাম, দপ্তর সম্পাদ ওছিম উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক নাফিছ আরা পপি, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রিমা বানু, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক মিতু আক্তার, নির্বাহী সদস্য বাবু সরকার প্রমুখ।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নওগাঁ বন্ধুসভা