‘মৃত্যুক্ষুধা’ এক বাস্তবসম্মত সমাজের চিত্রকল্প

সিলেট বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: সমরজিৎ হালদার

কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর যে সাহিত্যিক সৃষ্টি, তা সত্যিই তুলনাহীন। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর মধ্যে বিকশিত হয় বিদ্রোহী সত্তা। রাজদ্রোহিতার জন্য তিনি কারাদণ্ড পান। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ জন্য বিদ্রোহী কবি পরিচিতি লাভ করেন, সঙ্গে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ১৯৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

‘বাঁধনহারা’, ‘কুহেলিকা’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসের রচয়িতা কবি নজরুল ইসলাম। ‘মৃত্যুক্ষুধা’ তাঁর প্রথম সাম্যবাদী উপন্যাস। উপন্যাসের বিষয়বস্তু কবির বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। তখনকার দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে এ উপন্যাস এগিয়ে যায়। ১৯৩০ সালে এটি প্রকাশ পায়।

প্রায় দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও জীবনের নানামাত্রিক গতিময়তায় কয়েকটি সংখ্যায় তা অনুপস্থিত থাকে।

এক মিশ্রধর্মী গ্রামে এক বৃদ্ধা তার তিন বিধবা পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি ও একমাত্র জীবিত সন্তান প্যাঁকালেকে নিয়ে সংসার চালায়। প্যাঁকালে সামান্য আয়ে পুরো পরিবারের ভার বহন করে। দারিদ্র্য ও অভাবের চাপে একসময় মেজ বউ খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে, পরে প্যাঁকালেও প্রেম ও আর্থিক সচ্ছলতার আশায় খ্রিষ্টান হয়ে যায়। সন্তান ও বউকে ধর্মে হারিয়ে বৃদ্ধা মা হয়ে পড়ে একা, ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ে, যেন পাগলপ্রায়। অন্যদিকে একজন দেশপ্রেমিক আনসার সাহেব, যে কিনা ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য গ্রাম থেকে গ্রাম, শহর থেকে শহরে জনসচেতনতা এবং জনগণকে সংগঠিত করতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রশাসন তাকে রাঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়।

সিলেট বন্ধুসভার পাঠের আসর
ছবি: সমরজিৎ হালদার

কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাস নিয়ে পাঠের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। ২৩ মে প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

বই পর্যালোচনায় বন্ধু সূবর্ণা দেব বলেন, ‘মৃত্যুক্ষুধা’ এক বাস্তবসম্মত সমাজের চিত্রকল্প।

বন্ধু শাহরিয়ার হক বলেন, আনসারের চরিত্র নজরুলেরই এক বিপ্লবী প্রতিচ্ছবি। যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানে না, কিন্তু মানুষকে ভালোবাসে ধর্মের থেকেও বেশি।

বইটি নিয়ে আরও আলোচনা করেন বন্ধু মাজেদুল ইসলাম, আবদুল মোহায়মিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, সমীর বৈষ্ণব, ফরসাল আহমেদ, ফারহানা হক অমি, অনুপমা দাস, কৃত্য ছত্রী, কিশোর দাশ, প্রত্যাশা তালুকদার, প্রীতম তালুকদার, যুবরাজ রায়, সুমন দাসসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা