শোষণের বিরুদ্ধে মানবতার জাগরণ ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’

শাবিপ্রবি বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

সেলিনা হোসেনের ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি হলো বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত দলিল। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সোমেন চন্দ ও মুনীর চৌধুরী, তাঁরা ব্যক্তি হয়েও এক বৃহত্তর চেতনার প্রতীক—যাঁরা ঔপনিবেশিক শাসন, সামাজিক বৈষম্য এবং সর্বোপরি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে গেছেন।

২৪ অক্টোবর সেলিনা হোসেনের ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র করে শাবিপ্রবি বন্ধুসভা। অনুষ্ঠিত হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি সেন্টার ভবনে।

পাঠচক্রের সঞ্চালক বন্ধু আলামিন ইসলাম বলেন, উপন্যাসটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে লেখিকা তৎকালীন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দ্বন্দ্ব-সংকটকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এই উপন্যাসে সেলিনা হোসেন দেখিয়েছেন বিভক্ত দেশের ক্ষত, শোষিত জাতির আর্তি আর নবজাগরণের স্বপ্ন। কীভাবে রেলশ্রমিক নেতা সোমেন চন্দ শ্রেণি সচেতনতা ও সাম্যবাদের মন্ত্রে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং কীভাবে মুনীর চৌধুরী বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করে ভাষার অধিকার ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করেছেন।

বন্ধু মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাসের মূল সুর হলো সংগ্রাম, যা চরিত্রদের জীবন থেকে উৎসারিত হয়ে ইতিহাসের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। তাদের এই সংগ্রাম নিরন্তর এক ঘণ্টাধ্বনির মতো, যা সময়ের সীমা অতিক্রম করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছে দেয়। এই উপন্যাস শুধু ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন নয়, এটি বাঙালির সংগ্রামী ঐতিহ্য ও চিরন্তন মানবতাবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

পাঠচক্রের আসরে উপস্থিত ছিলেন বন্ধু শাফিনুর ইসলাম, জোনাকি আক্তার, শিলা আক্তার, মোস্তাকিম বিল্লাহ, টিটু আহমেদসহ অন্য বন্ধুরা।