‘তুমি কিছুদিন এই স্কুলে পড়তে চাচ্ছ, ভালো। কিন্তু বড় ধরনের দুষ্টুমি করে কোনো ক্ষতি করবে না তো?’ আমাদের প্রধান শিক্ষক চেয়ারটা আরও একটু পেছনে ঠেলে বললেন, ‘তোমাকে বিশ্বাস করব কীভাবে আমরা?’ ‘বিশ্বাস আসলে অন্য রকম জিনিস স্যার’ মন্তব্য করে রাসাদ মাথা চুলকাতে চুলকাতেই বলল, ‘বিশ্বাসের ইংরেজি হচ্ছে বিলিভ (Believe)। এই বিলিভের ভেতরই কিন্তু লাই (lie) লুকিয়ে আছে; যার মানে হলো মিথ্যা।’ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাসাদের দিকে। আবার ঘামতে শুরু করেছে সে। এতক্ষণ সে যা যা বলেছে, তার সবই মিথ্যা। সে আসলে দুর্দান্ত একটা কাজ করতে এই স্কুলে এসেছে। আপাতত কাউকে বলা যাবে না সেটা। গ্রন্থ আলোচনায় কথাগুলো বলছিলেন বন্ধু প্রাপ্তি ঘোষ।
পাঠের শুরুর আলোচনাটি সবাইকে ধাঁধায় ফেলে দেয়, এরপর কী হতে যাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উৎসুক চোখের একদল তরুণকে নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর পাঠচক্রের আয়োজন করে ভৈরব বন্ধুসভা। সেদিন সকাল থেকেই সূর্য আকাশে আলো ছড়াচ্ছিল। হঠাৎ করে যেন দাবদাহ বেড়ে গেল। ‘বই জানি স্বপ্ন বুনি’ শিরোনামে ১৫ দিনব্যাপী আটটি বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচির ষষ্ঠ আয়োজনটি হয় ভৈরব পৌর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এবারের বিষয় ছিল সাংবাদিক ও লেখক সুমন্ত আসলামের কিশোর উপন্যাস ‘রোল নাম্বার শুন্য’। ১৬৬তম এই পাঠের আসর সঞ্চালনা করেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু। গ্রন্থ আলোচনার শুরুতেই বন্ধু সাদিয়া সরকার লেখক সুমন্ত আসলামকে নিয়ে আলোচনা করেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন গ্রন্থ আলোচনায় বলেন, রাসাদ ক্লাসে গিয়ে গ্লাস থেকে পানি গায়েব করার জাদু দেখানোর পর, সব শিক্ষার্থীর মনে শেখার আগ্রহ তৈরি হয়। বাবাকে খুশি করার জন্য কিছু টিপস শিখিয়ে দেয় রাসাদ। মূলত স্কুলের মাঠকে রক্ষা করার জন্যই ছিল তাদের মিশন। বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে যেকোনো কাজ করা সম্ভব। নিলয়, জহির, সাদমান, ইফতি, টমাস, রাব্বির সঙ্গে রাসাদের বন্ধুত্বের শক্তি ছিল বলেই তারা শেষে স্কুল মাঠটি ফিরে পেয়েছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান অনুভূতি প্রকাশ করে বলে, ‘“রোল নাম্বার শুন্য” নামটা দেখেই বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মায়। শুরু থেকে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু পরে একটা রহস্যের মধ্যে যেন ডুবে গেলাম।’ একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রুওইয়াইদা আলিফ বলে, ‘বেশ কয়েকটি বিষয় আজ শিখলাম। তার মধ্যে বন্ধুত্বের শক্তির দিকটি খুবই ভালো লেগেছে। বন্ধুরা এক থাকলে বিজয় আসবেই।’ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন ইসলাম বলে, একটা খেলার মাঠের জন্য রাসাদের দলের কাজটি খুব ভালো লেগেছে।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তরুণেরা হলো দেশ গড়ার কারিগর। তরুণদের দ্বারাই বিপ্লব ঘটে। বই পড়ার মাধ্যমে শেখার জায়গা তৈরি হয়। আজ নিশ্চয়ই বইটি পড়ে পাঠের আলোচনা শুনে নতুন কিছু শিখেছ।’
ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদ হোসাইনের সঞ্চালনায় কুইজ পর্বের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে বলে পর্বটি বেশ জমজমাট হয়। কুইজ বিজয়ীরা হলো নবম শ্রেণির পুষ্প আক্তার ইভা ও ইসরাত জাহান অমি এবং অষ্টম শ্রেণির নুসরাত জাহান মম। পুরস্কার তুলে দেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা আলাল উদ্দিন, ওয়াহিদা আমিন ও সুমাইয়া হামিদ।
পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, বন্ধু জিহাদ, হান্নান হিমু প্রমুখ। পাঠের আসরটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়।
পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা