মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনলেন নোয়াখালীর বন্ধুরা

জেলা শহরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে নোয়াখালী বন্ধুসভার মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আসরছবি: বন্ধুসভা

বাঙালির ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ–বেদনায় মিশে আছে এক ঐতিহাসিক বীরত্বের গল্প। যে গল্পে নায়ক ছিলেন লাখো ছাত্র, কৃষক, ডাক্তার, লেখক, কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ। আর মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের একটা অবিস্মরণীয় অংশ হলো ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন। তাই এদিন পালন করা হয় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আসর আয়োজন করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা।

১৭ এপ্রিল বিকেলে জেলা শহরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেন নোয়াখালীর কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান। সঞ্চালনা করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ আহমেদ।

পরিচয় পর্বের পর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালীর অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। জবাবে তিনি বলেন, ‘তখন আমার বয়স সবে সতেরো কি আঠারো হবে। আমরা তরুণেরা একসঙ্গে দেশের জন্য লড়াই করেছি। দেশকে বাঁচাতে আমাদের সঙ্গের অনেকেই প্রাণোৎসর্গ করেছে। তখন তো সবার মধ্যে একটাই চিন্তা কাজ করেছিল, কীভাবে সোনার বাংলাকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করা যায়।’

এ সময় বন্ধু আফরিনা আনিকা জিজ্ঞাসা করেন, যুদ্ধের সময় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছে কি না? মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান বলেন, ‘যুদ্ধের সময় কারাবরণ করতে হয়নি। তবে বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। সে জন্য একবার সেনাবাহিনীর হাতে অনেক অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরে কারাবরণ করতে হয়েছে।’
যুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের পতাকা বানানো, পতাকা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছানো, বোমা বানানোসহ গেরিলাদের সঙ্গে থেকে সাহায্য করাসহ বিভিন্ন সময় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’

এ ছাড়া পায়ে হেঁটে ভারত প্রবেশ করার গল্প, যুদ্ধের সময় নোয়াখালীর বিভিন্ন ঘটনা, ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত হওয়ার ঘটনাসহ নানা গল্প তাঁর আলোচনায় উঠে আসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী শহরের চিত্র কেমন ছিল, সেটাও বর্ণনা করেন। বন্ধুরাও সে সময়ের কল্পনায় ফিরে যান।

অনুষ্ঠান শেষে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মানে আমার কাছে দেশ স্বাধীন করা। শত্রুর হাত থেকে নিজ মাতৃভূমিকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সর্বস্ব দিয়ে দেশের জন্য লড়াই করা।’ নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তোমরা বেশি বেশি দেশকে ভালোবাসো, দেশের জন্য কাজ করো।’

মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে আকাশে চমকাচ্ছিল কালবৈশাখীর বিজলি। কালো মেঘে চারদিক অন্ধকার হতে থাকে। আরও আয়োজন থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এদিন সেগুলো স্থগিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নোয়াখালী বন্ধুসভা দারুণ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। আজ আবহাওয়া খারাপের জন্য অনেক কিছু সম্ভব হয়নি। চরমপত্র পর্বটি আমরা শিগগিরই নতুন করে আয়োজন করব।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা সুমন নূর, কামাল হোসেন, লায়লা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শিমুল, দপ্তর সম্পাদক ধ্রুব ভূঁঞা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাহিদা সুলতানা, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত শিহাব, ম্যাগাজিন সম্পাদক নাফিস আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নুসরাত জাহান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আফরিনা আনিকা, কার্যকরী সদস্য নয়ন চন্দ্র কুরি, বন্ধু নুসরাত ফারিন, রুমাইয়া আক্তার, নাঈম হাসান, তাহমিদ আহমেদ, জুবায়ের হোসেন, ইমতিয়াজ দোলনসহ আরও অনেকে।

প্রচার সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা