বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আহ্বানে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিশুদের নতুন জামা ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে জামালপুর বন্ধুসভা। ৩ এপ্রিল বিকেলে শহরের অদূরে পূর্ব বামনপাড়া এলাকায় এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমে পূর্ব বামনপাড়া প্রাক্–প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদের নতুন জামা। স্কুলটিকে বেছে নেওয়ার কারণ, এর হৃদয়স্পর্শী ইতিহাস। বামনপাড়ার একটা ছোট অংশে নদীভাঙনের শিকার মানুষের বাস। তাঁদের ছেলেমেয়েরা যেমন শিক্ষার আলো পায় না, তেমনি বাল্যবিবাহের শিকার হয় অনেক মেয়েশিশু।
এলাকার ছেলেমেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দুই মহীয়সী নারী—পলি নাছির ও রওশন বিপ্লবী ছেলেমেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এই স্কুল। যেখানে শিক্ষক হিসেবে শুধু এই দুই বোন। তাঁদের দুজনকে সংগ্রাম করতে হয় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও। অভিভাবকদের বেশির ভাগই নিরক্ষর থাকায় তাঁদের বুঝিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে প্রতিটা পদক্ষেপে বেগ পেতে হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে চলছে তাঁদের এই সংগ্রাম।
স্কুলটির শিক্ষার্থীদের ঈদকে সুন্দর করার প্রয়াসে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন জামা। জামা পেয়ে চার বছরের শিশু জেদনি বলে, ‘আমার জামাডা লাল টকটকা, অনেক পছন্দ হইসে। এইবার নতুন জামা দিয়া ঈদ করমু।’
বিদ্যালয়টির শিক্ষক রওশন বিপ্লবী বলেন, ‘ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল, চাঁদের হাট বসেছে। সব বাচ্চা একসঙ্গে নতুন জামা পাচ্ছে। সবাইকে এত খুশি এর আগে কখনো দেখিনি। আজকের দিন বড় আনন্দের।’
দ্বিতীয় ধাপে শুরু হয় ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম। ৪০টি অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে এগুলো বিতরণ করেন বন্ধুরা। শেফালি নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবা, তোমগোরে মেলা ধন্যবাদ। সারা বছর ভালোমন্দ খাইতে পাই না। এইবার পোলা–মাইয়া নিয়া ঈদ ভালা কাটব।’
জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা আবদুল আজিজ বলেন, বন্ধুসভা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকে। এরই অংশ হিসেবে তাঁরা প্রতিবছর আয়োজন করেন সহমর্মিতার ঈদ। এ বছর খুবই ভালো আয়োজন হয়েছে।
সভাপতি জাকারিয়া জাকি বলেন, সহমর্মিতার ঈদের নতুন জামা এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার পাশাপাশি নগদ অর্থ প্রদান করা হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। সেটি চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।
বন্ধু, জামালপুর বন্ধুসভা