চল দোতং পাহাড় জুমঘরে

আলুটিলা পার্কের সামনে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুসভায় প্রতিবছর নতুন বন্ধুদের আগমন ঘটে, একসময় তাঁরা হয়ে ওঠেন সংগঠনের প্রাণ। তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এগিয়ে চলে সাংগঠনিক কার্যক্রম। নবীনদের সঙ্গে পুরোনোদের পরিচিত হওয়া এবং হাসি–আনন্দে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা প্রতিবছর বার্ষিক সাংগঠনিক ভ্রমণের আয়োজন করে।

১১ ফেব্রুয়ারি অর্ধশত বন্ধুর অংশগ্রহণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাসযোগে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে যাত্রা করে চবি বন্ধুসভা। এই আয়োজনে নতুনদের পাশাপাশি যোগ দেন বন্ধুসভার সেই সব বন্ধু, যাঁরা ছিলেন অতীতের পথচলার সারথি। তাঁদেরই একজন বাকী বিল্লাহ, তিনি অতীতে বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে সেভাবে সময় দিতে পারেন না। কিন্তু পুরো যাত্রাপথ তিনি নবীন বন্ধুদের গানের সুরে মাতিয়ে রাখেন।

বন্ধুদের জন্য সকালের খাবার আনা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরুণ উদ্যোক্তা তাইব পাঠানের ‘পাঠানের হেঁশেল’ থেকে। তাঁর রান্না করা খিচুড়ি আর মাংস ভুনা শীতের কুয়াশাজড়ানো সকালে সবার রসনাতৃপ্তির অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। খাওয়া শেষে ভোর ছয়টায় বাস গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে বন্ধুরা গাইতে থাকেন—‘চল দোতং পাহাড় জুমঘরে, পূর্ণিমা রাত বর্ষাজুড়ে জীবন জুয়ার আসর বসাব।’

ইটপাথরের বিবর্ণ জীবন ফেলে পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তা দিয়ে যখন বাস চলছিল, তখন বন্ধুদের মনে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। প্রথমে বন্ধুরা খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনায় গিয়ে স্বচ্ছ জলে স্নান করে পথের ক্লান্তি দূর করে নেন। ঝরনার জল পান করে প্রখর রৌদ্রে মেলে শান্তি। সেখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন কেউ কেউ। তাঁদের জীবনসংগ্রাম ও সংস্কৃতি দেখে অভিভূত হন সবাই। কত বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশ এই বাংলাদেশ!

তারপর যাওয়া হয় হর্টিকালচার পার্কে। যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় সুউচ্চ সোনালি চূড়াবিশিষ্ট বৌদ্ধবিহার এবং গগনচুম্বী বুদ্ধমূর্তি; যা যাত্রাপথে এক স্বর্গীয় অনুভূতি সৃষ্টি করে। হর্টিকালচার পার্কে দেখা যায় বিপুলসংখ্যক পাহাড়ি পণ্য ও খাবারের দোকান। এসব দোকানের বেশির ভাগ পরিচালনা করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীরা। দুপুরের খাবারের পর আমাদের গন্তব্য আলুটিলা গুহা ও আলুটিলা পার্কে। আলুটিলা গুহায় পদব্রজে ভ্রমণ ছিল অ্যাডভেঞ্চার ও রোমাঞ্চে ভরপুর। স্থানীয় জনগণ একে বলে ‘মাতাই হাকড়’ বা দেবতার গুহা। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে টর্চের আলো বা মশাল নিয়ে গুহার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল ও পাথুরে। এই গুহা নিয়ে লোকমুখে অনেক রহস্যময় ও অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত। আলুটিলা গুহা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে আমরা যাই নিকটেই অবস্থিত তারেং পাহাড়ে। গোধূলিলগ্নে সবুজ পাহাড়ের বুকে অস্তমিত লাল সূর্য যেন একখণ্ড লাল–সবুজের বাংলাদেশ।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খাগড়াছড়ি থেকে বাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসে আয়োজন করা হয় র‍্যাফল ড্র, যেখানে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী জিতে নেন ‘স্টার সিনেপ্লেক্স, বালি আর্কেড’ চট্টগ্রামে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফারে সিনেমা উপভোগ করার সুযোগ। পুরো সফর আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আমিন উদ্দিন, তন্ময় দত্ত ও আদিত্য গোস্বামী।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, চবি বন্ধুসভা