‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবারই দিন শেষে এক পরিচয়, মানুষ। কেউ বিপদে পড়লে আমরা তখন ধর্ম পরিচয় না খুঁজে বিপদে এগিয়ে যাই। নজরুল এই মানবতাবাদকে তাঁর কবিতায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন,’ বলছিলেন জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণে ‘স্মৃতিতে নজরুল’ শিরোনামে পাঠক সমাবেশ করেছে জামালপুর বন্ধুসভা। ১৩ সেপ্টেম্বর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের একাডেমিক ভবনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি ও নতুন পাঠক সৃষ্টির লক্ষ্যে এ আয়োজন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। জামালপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় নজরুলের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন অতিথিরা। তাঁদের বক্তব্যে উঠে এসেছে নজরুলের কবিতার বিপ্লবী চেতনা, মানবতাবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্যবাদ ও বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের কথা।
আশেক মাহমুদ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল হাই আলহাদী জাতীয় কবির সাহিত্যের সব্যসাচী বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি নজরুলের বংশমর্যাদা নিয়ে দারুণ কিছু বিশ্লেষণ উপহার দেন। জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক হিশাম আল মহান্নাভ নজরুলের অসাম্প্রদায়িক সাহিত্যের কথা তুলে ধরেন।
জাহিদা সফির মহিলা কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোজাহিদুর রহমান নজরুলের সাম্যবাদ নিয়ে বলেন, ‘নারী-পুরুষের বাহ্যিক পার্থক্য থাকলেও ভেতরের শক্তির কোনো পার্থক্য নেই। পৃথিবীর সব সুন্দর সৃষ্টিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের রয়েছে সমান ভূমিকা।’
আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘নজরুল আমাদের জাতীয়, ব্যক্তিগত জীবনসহ সবখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। নজরুলচর্চা জাতির মনোজাগতিক উন্নতির স্বার্থে বাড়ানো উচিত।’
আলোচনার পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক পর্ব। নজরুলগীতি পরিবেশন অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। জামালপুর বন্ধুসভার সহসভাপতি ডা. কাভী সেকান্দার আলম ও বন্ধু রাসেল মিয়া নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন। ‘লিচুচোর’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বন্ধু সাদিয়া জেরিন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিশা আনজুম।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা। উপস্থিত সবার অংশগ্রহণে মোট ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ১০ জন জিতে নেয় মহামূল্যবান বই। বিজয়ীরা অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে। পুরস্কার না পাওয়া অন্য পাঠকদেরও হতাশ হতে হয়নি। সবাইকে একটি করে চারাগাছ উপহার দেওয়া হয়।
সর্বশেষ সভাপতি ডা. জাকারিয়া জাকির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ইতি ঘটে। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা নাজমুল হাসান, মহসিন কাকনসহ বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা