ফেলুদার প্রথম দীর্ঘ অভিযান ‘সোনার কেল্লা’

সিলেট বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: সমরজিৎ হালদার

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে একজন সত্যজিৎ রায়। যিনি একাধারে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্পপ্রদর্শক, সংগীত পরিচালক ও লেখক। তিনি ২ মে ১৯২১ সালে কলকাতা শহরে বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশে। কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাশাপাশি একাডেমি (অস্কার) সম্মাননাসূচক পুরস্কার, দুটি রৌপ্য ভল্লুক, একটি গোল্ডেন লায়ন, ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখ্য। এ ছাড়া তিনি ভারতরত্ন, পদ্মভূষণসহ ভারতীয় মর্যাদাসম্পন্ন সব পুরস্কার লাভ করেন। হৃদ্‌যন্ত্রের জটিলতায় ১৯৯২ সালে মৃত্যুর পরে তিনি ২০০৪ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩তম স্থান লাভ করেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার প্রথম দীর্ঘ অভিযান ‘সোনার কেল্লা’ আজও পাঠক-মন জয় করে চলেছে। সত্যজিৎ রায় রচিত এই রহস্য উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালে শারদীয়া দেশ পত্রিকায়। পরে এটি সংকলিত হয় ‘ফেলুদা সমগ্র ১’-এ।

গল্পের মূল চরিত্র রাজস্থানের এক বালক মুকুল ধর, যে দাবি করে, তার পূর্বজন্মে সে এক সোনার কেল্লায় থাকত। এই কথা জানতে পেরে, তাকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন প্যারাসাইকোলজিস্ট ডাক্তার হেমাঙ্গ হাজরা। শুরু হয় এক অভিযাত্রা রাজস্থানের পথে। কিন্তু মুকুলের অতীতের স্মৃতি শুধু কৌতূহলের কারণ নয়— তার পেছনে লেগে পড়ে এক দুষ্টচক্র, যারা খোঁজে সোনা ও গুপ্তধনের।

এই জটিল রহস্য সমাধানে এগিয়ে আসেন গোয়েন্দা প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা, তপেশরঞ্জন মিত্র এবং মজার চরিত্র লেখক লালমোহন গাঙ্গুলী (জটায়ু)। রাজস্থানের মরুপ্রান্তর, প্রাচীন দুর্গ, রেলযাত্রা এবং নানা চমকপ্রদ ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা মুকুলকে উদ্ধার করে এবং উদঘাটন করে এক চমকপ্রদ সত্য।

গল্পটির সাহিত্যমান, চরিত্রচিত্রণ এবং বাস্তবভিত্তিক বর্ণনা এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে ১৯৭৪ সালে সত্যজিৎ রায় নিজেই এটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন। ‘সোনার কেল্লা’ চলচ্চিত্রটিও কালজয়ী হয়ে ওঠে। বাঙালি পাঠকের কাছে ফেলুদার এই অভিযান আজও রোমাঞ্চ, কৌতূহল ও গর্বের এক অনন্য সম্পদ।

সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সোনার কেল্লা’ গল্পটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। ২ মে বিকেলে সিলেট বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রে বইটির প্রকাশকাল, বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সিলেট বন্ধুসভার পাঠের আসর
ছবি: সমরজিৎ হালদার

বই পর্যালোচনায় বন্ধু প্রণব চৌধুরী বলেন, ফেলুদা শুধু বুদ্ধিমান নয়, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার যুক্তিবাদী ও সাহসী। তার সঙ্গে তপেশ আর লালমোহনের টিমওয়ার্ক গল্পে যেন প্রাণ এনে দেয়।

বন্ধু সমরজিৎ হালদার বলেন, ‘সোনার কেল্লা’ শুধু গল্প নয়, এক সময় অতিক্রান্ত অভিযাত্রা। যেটি আজও বারবার পড়া যায় একই আগ্রহে। আর মুকুলের জাতিস্মর কথাটা যদি পত্রিকায় প্রকাশিত না হতো, তাহলে মুকুলও হয়তো লোভী মানুষের হাতে পড়ত না।

বন্ধু আরিফা খানম বলেন, ‘লেখকের সিনেম্যাটিক দৃষ্টিভঙ্গি গল্পের প্রতিটি দৃশ্যকে জীবন্ত করে তোলে।’ এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু প্রীতম তালুকদার ও অম্লান রায়।

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, সমীর বৈষ্ণব, ফয়সাল আহমেদ, শ্রেয়ান ঘোষ, সূবর্ণা দেব, অনুপমা দাস, শাহরিয়ার হক, জুনায়েদ আহমেদ, কিশোর দাস, প্রত্যাশা তালুকদার, মিনথিয়া রহমান, শতাব্দী দত্ত, যুবরাজ রায়, আদনান আহমদ, মাহবুবুর হোসাইনসহ অন্যান্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা