টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে বন্ধুদের প্রশিক্ষণ

কর্মশালার এক পর্যায়ে প্রশিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

বর্তমানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে বিষয়টিকে প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রের জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশও জাতিসংঘের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান, যার অন্যতম নিয়ামক হলো জ্বালানি। পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ চলমান। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করতে এ বিষয়ে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানে না। প্রথম আলো বন্ধুসভা তরুণদের এ বিষয়ে সচেতন করতে কাজ করছে। তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সভা, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বন্ধুরা অংশগ্রহণ করছেন।

২১ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর মিলনায়তনে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ- এর আমন্ত্রণে দিনব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বন্ধুসভার বন্ধুরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে একই স্থানে ১৬ মার্চ দিনব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নেন বন্ধুরা।
এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে বন্ধুরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক সম্যক ধারণা অর্জনের পাশাপাশি নানা বিষয়ে প্রশ্ন ও উত্তর খুঁজে নেন। এমনই এক প্রশ্নে ফাহমিনা বর্ষা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নেই। বিদ্যমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রধান অন্তরায় কী? এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিকল্পনাগুলোর ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি সেক্টর বিশেষ করে তরুণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। কর্তৃপক্ষ ঠিক কোন উপায়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে এ ধরনের প্রকল্পের আওতায় আনবে?
এর উত্তরে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রধানরা অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারেন না; সে জন্য এক মাসের মধ্যে যাচাই–বাছাই শেষ করে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সেটি দুই বছরেও শুরু করা সম্ভব হয় না। এভাবে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয় না। এ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুইডেন দূতাবাসের প্রতিনিধি ‘নায়োকা’ সম্মতি প্রদান করেন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন
ছবি: বন্ধুসভা

এ সময় বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে বিদেশি অর্থায়ন পৌঁছাতে সরকারি আইডিসিওএল এবং পিকেএসএফ–এর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সব বেসরকারি সেক্টরে অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নীতিগত সুবিধার সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়েও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

‘টেকসই প্রকৃতির জন্য চাই টেকসই শক্তি’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ সহায়তায় ঝুঁকি প্রশমন, প্রকল্প নির্ধারণে বাস্তবসম্মত কার্যকর পদক্ষেপ, ব্যাংকিং সেক্টরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, অর্থায়নে কার্যকর ব্যবহারে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন কৌশল নির্ধারণের সুপারিশ পেশ করা হয়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা বন্ধুদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

২১ মার্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সাবেক দূত মো. আবুল কালাম আজাদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, অর্থনীতিবিদ মুসতাক খান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খানসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, গবেষক ও বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা। এর আগে ১৬ মার্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রাব্বি সাদেক, ক্যাবের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা শামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ এনামুল হক, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকশন, জ্বালানি ও শক্তিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়েশা খান প্রমুখ।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ, ঢাকা মহানগর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বন্ধুসভার বন্ধুরা অংশগ্রহণ করেন।