নারী ও কিশোরীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ

স্যানিটারি ন্যাপকিন হাতে নারী ও কিশোরীরা
ছবি: বন্ধুসভা

মাসিক বা ঋতুস্রাব হলে সারা জীবনই পুরোনো কাপড়ের কিছু অংশ ছিঁড়ে ব্যবহার করে আসছিলেন ৪৫ বছরের গৃহিণী অখিলা বানু। কাঠ আর টিনের তৈরি চৌচালা ঘরের যৌথ পরিবারে ঋতুস্রাবে ব্যবহৃত কাপড়টুকু শুকাতেও বিড়ম্বনা হতো লজ্জায় আর সংকোচে। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মেয়ে যখন বাবার কাছে প্যাড কেনার কথা বলে, তখন অখিলা বানু রেগে গিয়ে মেয়েকে আলাদা ডেকে নিয়ে বলেন, ‘তোগো লজ্জা–শরম সব খোয়াই গেছে। কাল থেকে তোকে আর স্কুলে যাওন কাম নাই।’

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে ঋতুস্রাবের সময় সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনে সচেতনতায় গ্রামের নারী ও কিশোরীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও খাবার বিতরণ করেছে খুলনা বন্ধুসভা। ২৮ অক্টোবর বিকেলে খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারায় এক উঠান বৈঠকে ৬০ নারী ও কিশোরীর মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হয়। বৈঠকে নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে নারীদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন বক্তারা।

স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করছেন দুই বন্ধু
ছবি: বন্ধুসভা

খুলনা বন্ধুসভার সভাপতি অধ্যাপক তুহিন রায় বলেন, নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে নিরাপদ হওয়া দরকার, তা সমাজে খুব কম ভাবা হয়। অথচ মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। এ সময় অপরিচ্ছন্ন থাকলে নানা রকম রোগ হতে পারে। পিরিয়ডের সময় কেবল পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতার অভাবে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং পুরোনো কাপড়ের পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা তাই জরুরি।

খুলনার রেভারেন্ড পলস হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষিক বনানী আফরোজা বলেন, পিরিয়ড একটি ন্যাচারাল প্রক্রিয়া। প্রত্যেক নারীর জীবনে এটি ঘটে থাকে। তবু সমাজে বিষয়টিকে খুব আড়াল করে রাখা হয়। এর মধ্য দিয়ে নারীদের শারীরিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতাকেই ব্যাহত করা হয়। পিরিয়ডকালীন নারীদের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা এবং আমিষজাতীয় খাবারের ওপর গুরুত্বারোপ করা খুবই জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের জীবনের প্রভাব সম্পর্কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিত সরদার বলেন, একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মেয়েরা দ্রুত বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করে। অবস্থানগত কারণেই জলবায়ুর এই প্রভাব পড়ে থাকে। দুটি কারণে দেশে নারীদের মধ্যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের হার কম। প্রথমত, মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যে নিরাপদ হওয়া দরকার, তা সমাজে খুব কম ভাবা হয়। দ্বিতীয়ত, দোকানে ১০টির এক প্যাকেট স্যানিটারি প্যাডের দাম ১৩০ টাকার বেশি; যা সীমিত আয় ও দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে।

৬০ নারী ও কিশোরীর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়
ছবি: বন্ধুসভা

যাঁদের প্যাড কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের উদ্দেশে গ্রাম্য চিকিৎসক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, কাপড়ের অংশবিশেষ কেটে নিয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে কৌটায় ভরে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করবেন এবং পিরিয়ডকালে ব্যবহার করতে পারবেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি আসফিক আহম্মেদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাপন কংস বণিক, দপ্তর সম্পাদক ফারজানা যুথি, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মো. রহমাতুল্ল্যাহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা রহমান, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলফি শাহরিন, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রীশয়াত রওশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিফা ইয়াসমিন, খুলনা আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী মিতা মাহমুদ, বন্ধু সোমা আক্তার, ইখতিয়ার উদ্দীন, ইমন মিয়া, প্রিয়া রায়, কেয়া রায়, সাকিব প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক, খুলনা বন্ধুসভা