বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়। হুমায়ূন আহমেদ এই চলচ্চিত্রে আবহমান বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই ছবিতে সর্বমোট ৯টি গান যুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে চারটি গান নেওয়া হয়েছে বিখ্যাত বাউল সাধক উকিল মুন্সীর। অন্য একটি গান ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ রচনা করেছেন আরেকজন বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন। হুমায়ূন আহমেদ নিজে লিখেছেন চারটি গান। খুব সম্ভবত এই গানগুলোর মাধ্যমেই তিনি গীতিকার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বারী সিদ্দিকী তাঁর অনবদ্য প্রতিভার বিরল স্বাক্ষর রেখে গেছেন এই চলচ্চিত্রে।
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ উপন্যাসে মতি একজন গায়ক। তাকে মনে মনে ভালোবাসে ঐ গ্রামেরই একটি মেয়ে কুসুম। তার গানের গলাও খুব ভালো। সে সব সময় ভাবে মতি মিয়াকে নিয়ে একটা গানের দল করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা ঐ গ্রামের জমিদার নাতনি শাহানাকে ভালোবাসে মতি। তবে সে জানে না, শাহানা তাকে কেবল একজন ভালো মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে। এদিকে, কুসুমের বাবা উজান থেকে সুরুজ নামের একটি ছেলেকে নিয়ে আসে কুসুমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য। ঐ গ্রামের বাসিন্দা পরানের স্ত্রী প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল, জমিদারের নাতনি শাহানা একজন ডাক্তার, এই ভেবে মতি মিয়া তাকে ডেকে আনে। শাহানা এসে বুঝতে পারে, ওনার পেটের বাচ্চা উল্টে আছে। সে বইতে পড়েছে এর চিকিৎসার ব্যাপারে; কিন্তু বাস্তবে কখনো করেনি। কোনো উপায় না দেখে সাহস করে সে সন্তান স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারি করাতে সক্ষম হয়।
যেই জমিদারকে এলাকার সবাই ঘৃণার চোখে দেখত, এর পর থেকে সবাই তাকে সম্মান করে। একদিকে কুসুমের বিয়ের আয়োজন চলছে, অন্যদিকে জমিদারের নাতনিরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে জমিদারসহ। জমিদার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিল। তাই গ্রামের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তার জমিদার বাড়ি একটি হাসপাতালের জন্য দান করে বিদায় নেয়। গ্রামের প্রাই সবাই চলে আসে তাদের বিদায় জানাতে।
কুসুম বাড়িতে একা। মতিকে না পাওয়ার কষ্টে সে বিষ পান করে। কুসুমের মা টের পেয়ে সবাইকে ডাকে এবং তাকে নিয়ে মতি আর সুরুজ নৌকায় ছোটে ডাক্তার শাহানার কাছে। কিন্তু মাঝপথেই সোয়া চান পাখি চিরনিদ্রায় শায়ীত হয়। আর মতি গেয়ে ওঠে, ‘শুয়া চান পাখি, আমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছ নাকি….।’
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। ২৫ এপ্রিল বিকেলে প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
পাঠচক্রে বইটির প্রকাশকাল, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু সুমন দাস। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ মানেই মুগ্ধতা। এই বইটাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধুরী মিশ্রিত বর্ণনা বইটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
বন্ধু শেখ ফয়সাল আহমেদ বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সব রচনার মতো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ উপন্যাসের মূল উপজীব্যও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। গ্রামীণ সাধারণ মানুষের চোখে জীবনের যে ছবি আঁকা, তারই প্রতিচ্ছবি লেখক এই উপন্যাসটিতে উপস্থাপন করেছেন।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা