মিরপুর বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘বিষাদ-সিন্ধু’

মীর মশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদ–সিন্ধু’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

উপমহাদেশের মুসলিম সাহিত্যে এক অনন্য উচ্চতায় মীর মশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদ–সিন্ধু’। মহাকাব্যিক উপন্যাসটি একদিকে করুণ পরিণতির বর্ণনায় পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে, অন্যদিকে ইসলামের ইতিহাসের এক বেদনাবিধুর অধ্যায়কে চিরস্মরণীয় করে রাখে।

১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ সালে তিন ভাগে এ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে একখণ্ডে সংকলিত হয় ‘বিষাদ–সিন্ধু’। উপন্যাসটি কারবালার করুণ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে রচিত। এতে ইমাম হোসেন (র.) ও তাঁর সঙ্গীদের আত্মত্যাগ, যাযাবর জীবনের বর্ণনা ও শোকাবহ পরিণতির বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। লেখকের সাহিত্য ভাষা, বর্ণনার আবেগ ও চরিত্রচিত্রণের গভীরতা এটিকে বাংলা মুসলিম সাহিত্যের ধ্রুপদি রত্নে পরিণত করেছে।

উপন্যাসটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। যেখানে একদিকে প্রাসাদ চক্রের ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াইয়ের চিত্র আঁকা হয়েছে অপূর্বভাবে। মীর মশাররফ হোসেন ইসলামি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মূল্যবোধকে এমনভাবে সাহিত্যরূপ দিয়েছেন, যা বাংলা ভাষায় এর আগে কেউ করেননি।

মীর মশাররফ হোসেন সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন মুসলিম ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবময় অথচ করুণ এ অধ্যায়। বর্তমানে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত, সাহিত্য গবেষণার বিষয় ও ধর্মীয় আবেগে প্রভাবিত অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে ‘বিষাদ–সিন্ধু’ আজও সমান জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক।

১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে মীর মশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদ–সিন্ধু’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে মিরপুর বন্ধুসভা। পাঠচক্রে উপন্যাসের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধুরা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বন্ধুদের সাহিত্য আড্ডা ও চা-চক্র।

উপন্যাসটির খুঁটিনাটি বিষয়, সফল উপন্যাস বলা যায় কি না, ঐতিহাসিকভাবে কতটা সত্য ও মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টা অপূর্ব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘বিষাদ–সিন্ধু’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি মুসলিমদের আত্মত্যাগ, সাহস, ও সত্যের প্রতি নিষ্ঠার এক চিরন্তন দলিল।

সভাপতি মুহাইমিনুর রহমান বলেন, কাহিনি বিনির্মাণে, চরিত্রচিত্রণে, নাটকীয়তা, বিষয়–উপযোগী ঝরঝরে গদ্যভাষা, শিল্পীর জীবনবোধ ও আধুনিক উপন্যাসের লক্ষণ বিচারে ‘বিষাদ–সিন্ধু’ উপন্যাসই।

বইটি পাঠ করেন বন্ধু মেহরাব ইবনে সালাম। পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী সদস্য মুশফিকুর রহমান, বন্ধু সাইফুল ইসলামসহ অন্য বন্ধুরা।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক, মিরপুর বন্ধুসভা