আলোর শিক্ষায় শিশুরা

স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমসি কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

একেবারে শুরুর দিকের কথা। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কিছু একটা করার। তখন আমি সিলেটের এমসি কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী। এটাও বুঝতে পারছিলাম যে, এককভাবে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। পরিচিত কয়েকজন বন্ধুকে জানালে এগিয়ে আসে আমিনুল ইসলাম, আহমদ আলমগীর, তানভীর মাহফুজ ও মুহিবুব হোসেন। সবাই মিলে চালু করলাম ‘এবিসি স্কুল’ নামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান।

এভাবেই স্কুলটির প্রতিষ্ঠার গল্প বলছিলেন এমসি কলেজ বন্ধুসভার উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন। ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলটির যাত্রা শুরু। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের নিয়ে ক্লাস শুরু করা হয়। তখন নির্দিষ্ট কোনো কক্ষ না থাকায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন খোলা জায়গায় শিশুদের পড়ানো হতো। বই, খাতা, কলম, ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসে কলেজের বিভিন্ন সংগঠন। সপ্তাহে এক দিন, শুক্রবারে ক্লাস করানো হয়।

তারপর ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলটির কার্যক্রমও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। মহামারি শেষে কলেজ খুললেও স্কুলটি চালানোর মতো কেউ ছিল না। এমন অবস্থায় স্কুলটির দায়িত্ব নেয় এমসি কলেজ বন্ধুসভা। বর্তমানে এটি বন্ধুসভার বন্ধুরাই চালাচ্ছেন। নিবন্ধিত শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৪০ জন।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা জানান, সবার মধ্যে শিক্ষার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টা থেকে বন্ধুদের নিয়ে স্কুলটির কার্যক্রম শুরু করা হয়। উদ্দেশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা মূল্যে অংশগ্রহণমূলক পাঠদান, দায়িত্বশীল এবং সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

বর্তমানে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তৃতীয় ব্লকের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনের অনুমতি সাপেক্ষে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি শিশুশিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে বছরজুড়ে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে তাদের জন্য খেলাধুলা, আনন্দভ্রমণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গান ও কবিতা আবৃত্তির মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব কার্যক্রম বন্ধুদের অর্থে পরিচালিত হয়। উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্খীরাও অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন।

এ বিষয়ে এমসি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম দাস বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষিত ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সচেতন নাগরিক তৈরির বিকল্প নেই। এমসি কলেজ বন্ধুসভার পরিচালিত এবিসি স্কুল সেই লক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

বন্ধুসভার এই কাজের প্রশংসা করেছেন এমসি কলেজের শিক্ষকেরাও। গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলীপ রায় বলেন, ‘স্কুলটির কার্যক্রম সূচনালগ্ন থেকে দেখে আসছি। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে দিনের পর দিন পাঠদান চালিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এটি কেবল নিঃস্বার্থ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। যেটি এমসি কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুরা করে যাচ্ছেন।’

সাধারণ সম্পাদক, এমসি কলেজ বন্ধুসভা