নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এগিয়েছে অনেকটা। তাদের লড়াই করতে হয়েছে লিঙ্গবৈষম্যসহ নানা প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে। এখনো আমরা নারীদের সমতার পৃথিবী দিতে পারিনি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে স্বপ্নময় নারীদের নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে জামালপুর বন্ধুসভা। ৮ মার্চ বিকেলে সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত এই পাঠের আসরের বিষয় ছিল কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের নতুন উপন্যাস ‘কখনো আমার মাকে’।
প্রথমেই দপ্তর সম্পাদক সানি সিরাজ বইটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘কখনো আমার মাকে’ মফস্বলের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে বেড়ে ওঠা ভাইবোনের গল্প। পরিবারে তিন ছেলে বাবলু, ডাবলু, মাবলু। এদের ছোট বোন লাভলি। ছোট মা, বড় মা এবং বাবা। কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা, কেরোসিনের বাতিতে পড়াশোনা, হাফ পেডেলে সাইকেল চালানো, সন্ধ্যার আজানের আগে বাড়ি ফেরা। এভাবে চলতে চলতে বাবলু, মাবলুরা একদিন অনুভব করে তারা বড় গেছে। তারা একা হয়ে গেছে। ‘বড় হওয়া ভালো নয়, বড় হলে মানুষ একা হয়ে যায়’।
‘কখনো আমার মাকে’ একজন মায়ের গল্প। একজন ছোটমার গল্প। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদাররা নারীদের তুলে নিয়ে রাখত তাদের ক্যাম্পে। রাতভর তাদের ওপর চালানো হতো নির্যাতন। যুদ্ধ শেষে এই বীর নারীদের সমাজ মর্যাদা দিতে পারেনি। উল্টো তাঁদের নামে নানা কুকথা রটনা হতো। নিজের পরিবার তাদের জায়গা দিত না। ‘কখনো আমার মাকে’ সেই বীরাঙ্গনা মায়ের গল্প।
‘কিছু কিছু উপন্যাস অন্য রকম। বুকের মধ্যে হাহাকার তৈরি করে। পড়ার পুরোটা সময়জুড়ে শূন্যতা অনুভব হয়। মাঝেমধ্যে চোখ ভিজে ওঠে। আনিসুল হকের “কখনো আমার মাকে” সে রকম মমতা মাখানো আখ্যান।’ বলছিলেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরুল ইসলাম। এরপর বইটির বিভিন্ন অংশ পাঠ করে শোনান ম্যাগাজিন সম্পাদক সোমাইয়া সরকার, বন্ধু জুঁই, রোমানা, শশী, মেঘলা।
দ্বিতীয় পর্বে সব নারী বন্ধুকে নিয়ে চলে কর্মসংস্থানবিষয়ক আলোচনা। সবাই কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরেন। মেয়েদের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ও যে কারণগুলোর কারণে মেয়েরা পিছিয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত, সেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। এসব বিষয়ে সহসভাপতি ডা. কাভী সেকান্দার আলম বলেন, ‘মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার মূলে রয়েছে প্রবল ইচ্ছাশক্তির অভাব। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার মনমানসিকতার অভাব। যদি প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলেই সব প্রতিকূলতায় জয়ী হওয়া সম্ভব।’
সভাপতি ডা. জাকারিয়া জাকি বলেন, ‘একুশ শতকে মেয়েদের আর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। উপন্যাসের ছোটমার মতো দৃঢ বিশ্বাসের সঙ্গে সব প্রতিকূলতা দূর করে এগিয়ে যেতে হবে। দেশ এবং মানুষের কল্যাণে অবদান রাখতে হবে।’
সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন নারীদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো কাজে লাগাতে হবে।’
জেন্ডার সমতাবিষয়ক সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা