বই পড়া স্বপ্নদ্রষ্টা হতে শেখায়

পাঠচক্রের আসরে বই আলোচনা করছেন তানশি নাহার
ছবি: আনাস খান

বই পাঠের মাধ্যমে মন নির্মল আনন্দে ভরে ওঠে। একজন লেখকের সান্নিধ্য পাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো বই। বই পড়া মানুষকে স্বপ্নদ্রষ্টা হতে শেখায়। মুদ্রিত বই পড়ার দলগত আসর পাঠচক্র ভৈরব সভার নিয়মিত কর্মসূচি। ‘বই জানি স্বপ্ন বুনি’ শিরোনামে ১৫ দিনে ৬টি বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচির দ্বিতীয় আয়োজনটি ছিল কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ব্লু বার্ড স্কুলে।

১৬ সেপ্টেম্বর স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিয়ে পাঠচক্র আয়োজন করে ভৈরব বন্ধুসভা। এবারের বিষয় ছিল লেখক দন্ত্যস রওশনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস ‘নোটুর সেভেনটি ওয়ান’। ১৬৩তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন।

অনুভূতি জানাচ্ছে এক শিক্ষার্থী
ছবি: আনাস খান

কবিতার মধ্য দিয়ে লেখালেখির সূচনা, পরে গল্প-উপন্যাস ও শিশুসাহিত্য রচনায় সক্রিয় হন। ভালো লাগার বিষয় হলো, আজকের পাঠচক্রে আলোচনার বই ‘নোটুর সেভেনটি ওয়ান’-এর জন্য লেখক অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন— তথ্যগুলো জানান পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু।

‘নোটুর সেভেনটি ওয়ান’ গল্পের নায়ক নোটু। সে কৌশলে পাকিস্তানি আর্মির একটি লঞ্চে উঠে পড়ে। আর্মিদের নানা তথ্য অতি গোপনে সে পৌঁছে দিত মুক্তিযোদ্ধাদের। একসময় কাঁধে তুলে নেয় অস্ত্র। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হয় দেশজুড়ে। বড়দের সঙ্গে যুদ্ধে ছোটরাও জড়িয়ে পড়ে। গল্পের নায়ক নোটুর মতো অসংখ্য কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে সহায়তা করত। তাদের অধিকাংশ ছিল বার্তাবাহক, অনেকে যুদ্ধও করেছে। তথ্যগুলো উঠে আসে জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তানশি নাহারের আলোচনা থেকে।

পুরস্কার হাতে কুইজ বিজয়ীরা
ছবি: আনাস খান

বইটিতে এক কিশোরের নায়ক হয়ে ওঠার গল্প লেখক দারুণভাবে বর্ণনা করেছেন। পাঠক জড়িয়ে যায় নোটুর জীবনের সঙ্গে, তার প্রতিটি রোমাঞ্চকর ঘটনার সঙ্গে। ১৯৭১ সালে জেগে উঠেছিল বাংলার প্রতিটি মানুষ, তাদের দেশপ্রেম চেতনার সঙ্গে পাঠকও যুক্ত হয়ে পড়েন।

পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহরিয়ার ইবাদ গ্রন্থ আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘লেখক দন্ত্যস রওশন গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন; যা পড়ার সময় কল্পনায় ভাসে, হৃদয়ে দাগ কাটে। আমাদের মুক্তির যুদ্ধ কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। এটি চলবে, মুক্তি চাই শিক্ষার, সংস্কৃতির, সমাজের। গল্পের নায়কের নোটুর মতো একদিন তোমরাও দেশের জন্য কাজ করবে।’

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানা মীম বলে, ‘এত দিন শুধু বইয়ে পড়েছি, আজ নোটুর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় জড়িয়ে গেলাম।’ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী খুশি বলে, ‘নোটু আর আমি একই শ্রেণিতে পড়ি। আমার খুব ভালো লাগছে সবার আলোচনা শুনে।’ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর আরাফাত বলে, ‘গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সেভেনটি ওয়ান কোড ওয়ার্ডের বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। রোমাঞ্চকর বইগুলো ভালো লাগে।’ একই শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া খানম বলে, ‘বন্ধুসভার পাঠচক্রের জন্য বইটি পড়েছি। এখন আলোচনা শুনে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।’

পাঠচক্র শেষে স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুরা
ছবি: আনাস খান

ব্লু বার্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা আমিন বলেন, ‘ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রকে ঘিরে আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখেছি, তা ভীষণ ভালো লেগেছে। তারা স্কুল পাঠাগার থেকে বইটি সংগ্রহ করে দলগতভাবে আলোচনা করেছে। লেখক দন্ত্যস রওশন ও তাঁর সহধর্মিণী ফারহানা মোবিনের বেশ কয়েকটি শিশুতোষ বই রয়েছে ব্লু-বার্ড পাঠাগারে। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০টি বই পড়ে।’

পাঠের আলোচনা শেষে মনোযোগী শ্রোতাদের জন্য কুইজ পর্বের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে, পর্বটি বেশ জমজমাট হয়। পর্বটি সঞ্চালনা করেন ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদ হোসাইন। কুইজ বিজয়ীরা হলো ইসরাত জাহান, রাকিবুল ইসলাম, লামীম কাজী, আয়েশা আক্তার ও জান্নাতুল ইকরা। তাদের বই পুরস্কার দেওয়া হয়।

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা, কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা, আফিসা আলী, সেলিম রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সাইফ রহমান, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আনাস খান, বন্ধু জিহাদ, প্রাপ্তি ঘোষ, সাদিয়া সরকার, হান্নান হিমু। পাঠের আসরটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়।

কার্যনির্বাহী সদস্য, ভৈরব বন্ধুসভা