নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করল নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা

নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করল নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভাছবি: বন্ধুসভা

‘মধুর চেয়ে মিষ্টি ভারি আমার মায়ের ভাষা,
এই ভাষাতেই আছে আমার সকল চাওয়ার আশা।’

শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, পাঠচক্র, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বন্ধুরা। এরপর নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা অফিসে পাঠচক্র, কুইজ ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

পাঠচক্রের বিষয় ছিল নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার কালজয়ী রচনা ‘অবরোধ-বাসিনী’। অবরোধ-বাসিনী শব্দটি দ্বারা শৃঙ্খলায়িত থাকাকে বোঝায়। বইয়ে বেগম রোকেয়া ওই সময়কার নারীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ঘটনার বর্ণনা করেন। তৎকালীন সময়ে নারীশিক্ষা তো অনেক দূরের কথা, নারীর ঘরের বাইরে বের হওয়া, কথা বলা এবং অন্যান্য কাজেও ছিল প্রতিবন্ধকতা।

অবরোধ-বাসিনী বলতে লেখিকা যাঁদের বুঝিয়েছেন, তাঁরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের ভেতর গুটিয়ে থাকতেন। চারপাশে ছিল একধরনের অদৃশ্য শক্তি, যা সমাজের বিধিনিষেধ, ধর্মীয় গোঁড়ামির আতিশয্য, ভুল ব্যাখ্যা, অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। এসব থেকে শিক্ষাই ছিল মুক্তির পথ। আর সেই পথও ছিল নারীদের জন্য রুদ্ধ। বেগম রোকেয়া বহু সংগ্রাম করে নারীশিক্ষার ভিত রচনা করেছেন। শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়েছেন। ‘অবরোধ-বাসিনী’র শুরুতেই তিনি বলে নিয়েছেন, ‘আমরা বহুকাল হইতে অবরোধ থাকিয়া থাকিয়া অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছি। সুতরাং অবরোধের বিরুদ্ধে বলিবার আমাদের বিশেষত আমার কিছুই নাই। মেছোনীকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, “পচা মাছের দুর্গন্ধ ভালো না মন্দ?” সে কি উত্তর দেবে?’ এ কথা বলেই তিনি তাঁর স্বচক্ষে দেখা ঘটনার বর্ণনা শুরু করেন। যেখানে একজন নারী আরেকজন নারীর সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে কীভাবে লজ্জিত বোধ করে, সেই ঘটনার বর্ণনা টেনেছেন।

৪৭টি ছোটগল্প বা অণুগল্পের সমন্বয়ে গ্রন্থটি রচিত। ৮ নম্বর গল্পে দেখা যায়, ঘরে আগুন লাগলে গৃহিণী স্বর্ণালংকার কাপড়ে বেঁধে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দেখে, বাইরে পুরুষ মানুষ; তৎক্ষণাৎ সেই মহিলা ঘরের ভেতর ঢুকে খাটের নিচে বসে থাকেন। আগুন নিভে গেলে দেখা যায়, সেই মহিলা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ রকম পর্দাপ্রথার বাড়াবাড়ি ওই আমলে দেখা মেলে। প্রথমে বড় ভাই ও বোনের সহায়তা, পরে স্বামীর কাছ থেকে পড়াশোনা ও লেখালেখির উৎসাহ পেয়েছেন। বেগম রোকেয়াকে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বলা হয়। তিনি যে সাহসিকতা, উদার মনোভাব দেখিয়েছেন, তা আজও নারীদের অগ্রযাত্রায় অনুসরণীয়, অনুকরণীয়।

পাঠচক্র শেষে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কুইজে প্রথম হন সহসাংগঠনিক সম্পাদক মৌন লাকি, দ্বিতীয় হন কার্যনির্বাহী সদস্য নয়ন আহমেদ এং তৃতীয় পুরস্কার পান অর্থ সম্পাদক ইমরান নাজির। সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের পরিচালনা ও আফরিন সুলতানার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি গাজী খায়রুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবরার জামান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল জব্বার, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. সোহাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক আফসানা আক্তার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. হাসান প্রমুখ।

সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা