দিনভর রোদে, বৃষ্টিতে, ধুলাবালিতে যে শ্রমজীবী মানুষগুলো আমাদের শহরকে সচল রাখেন, সভ্যতার চাকা যাঁদের ঘামে ঘোরে—পয়লা মে দিনটি তাঁদের জন্য। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উদ্যোগে নগরীর মেয়র গলি থেকে শুরু করে ২ নম্বর গেট, বিপ্লবী উদ্যান এবং আশপাশের অঞ্চল ঘুরে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় ঠান্ডা শরবত ও একটি করে গামছা। ২০ জন রিকশাচালকের কাঁধে পরিয়ে দেওয়া হয় গামছা।
সকাল ১১টা থেকেই বন্ধুদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে এসব এলাকা। কেউ বাজার থেকে লেবু কিনে আনেন, কেউ সেগুলো কেটেছেন নিপুণ হাতে, কেউ পানি ভরেছেন ড্রামে, কেউ রোদে পুড়ে গ্লাসে গ্লাসে শরবত ঢেলেছেন পরম যত্নে। আবার কেউ গামছাগুলো ভাঁজ করে শ্রমিক ভাইদের হাতে তুলে দিয়েছেন; সবার চোখেই ছিল নিরলস আন্তরিকতার দীপ্তি।
বন্ধু শান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মনে করি, একজন মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিশাল আয়োজনের প্রয়োজন পড়ে না। একটি ঠান্ডা শরবতের বোতল বা ঘাম মোছার জন্য একটি গামছাও হতে পারে ভালোবাসা জানানোর ভাষা। এই শ্রমজীবী মানুষগুলোই আমাদের শহরের প্রকৃত নির্মাতা, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
রিকশাচালক শফিকুল ইসলাম হাসিমুখে বলেন, ‘গরমে এমন ঠান্ডা শরবত খাইয়া মনডা ঠান্ডা হইয়া গেল। গামছাডাও খুব কাজে আইব।’
চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত শ্রমিক ঘামে ভিজে এই শহরটাকে সচল রাখেন। আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক টুকরা প্রতিচ্ছবি। আমরা চেয়েছি তাঁদের দিনটা একটু হলেও স্বস্তির হোক।’
কার্যক্রম শেষে সবার মুখে ছিল আত্মতৃপ্তির হাসি, হৃদয়ে ছিল আনন্দ। যান্ত্রিক এই শহরে এমন আন্তরিক মুহূর্ত যেন হারিয়ে যাওয়া মানবিকতার পুনরুদ্ধার। এই আয়োজন আবারও প্রমাণ করল—সাহায্যের জন্য বাহারি মঞ্চ লাগে না, লাগে না ব্যয়বহুল সাজসজ্জা। দরকার কেবল একটি কোমল হৃদয়, কিছু সৎ হাত, আর একটুখানি সহমর্মিতার বোধ। বন্ধুসভার বন্ধুরা আজ তাই করে দেখালেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা