ফেসবুক-টিকটক থেকে যেভাবে টাকা আয় করবেন

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (প্রথম পর্ব)।

‘যেকোনো কিছু শুরু করার ক্ষেত্রে ভিত্তিটা শক্ত হওয়া উচিত। ভিত্তি শক্ত না হলে আমাদের সৃজনশীলতা ডানা মেলে উড়তে পারবে না। সৃজনশীলতাকে আকাশে ওড়ানোর জন্য আমাদের একদম বেসিক থেকে শুরু করা উচিত। আর যারা মনে করছে, আমি আসব, আর যা ইচ্ছা ভিডিও দিব, তাহলে আসলে কনটেন্ট তৈরি হয়তো কিছুদিন ভালো করা যেতে পারে; একটা সময় ঝরে পড়বে। তাই পরিকল্পনামাফিক আগাতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি এবং সেটি থেকে আয় করার ক্ষেত্রে বন্ধুসভার বন্ধুদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও এআই ইনস্ট্রাক্টর ওবায়দুর রহমান (রবিন রাফান)। এ সময় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নিজের শুরুর দিকের গল্পও শেয়ার করেন তিনি। ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি সব সময় স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওর প্রতি আগ্রহী ছিলাম। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও বানানো শুরু করি। প্রথমে চেষ্টা করেছিলাম ইউটিউব, ফেসবুকে দেওয়ার। কিন্তু ওরা বড় দৈর্ঘ্যের ভিডিও চাচ্ছিল। বড় ভিডিও সময়সাপেক্ষ এবং আমার মনে হয়, মানুষের এত সময় নেই যে তারা বড় ভিডিও দেখবে। টিকটক আসার পর আমার শর্ট ভিডিওগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষ পছন্দ করা শুরু করে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে টিকটকে চার মিলিয়ন ফলোয়ার পেয়ে যাই। তারপর ফেসবুকও রিলস বা শর্ট ভিডিও শুরু করল। সেখানেও এখন ভালো ফলোয়ার হচ্ছে।’

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে, প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। যেখান থেকে এআইসহ প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয় শেখা যাবে। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সঙ্গে বন্ধুসভা যৌথভাবে এই শো আয়োজন করছে।

৭ মে অনুষ্ঠিত হয় ভার্চ্যুয়াল এই টেক শোর প্রথম পর্ব। রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রতি সপ্তাহের বুধবার একই সময়ে এই টেক শো অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার প্রথম পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও এআই ইনস্ট্রাক্টর ওবায়দুর রহমান। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি ও জনপ্রিয় উপস্থাপক মৌসুমী মৌ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘ইউটিউব, টিকটক অ্যান্ড বিয়ন্ড: আর্নিং অ্যাজ আ ডিজিটাল ক্রিয়েটর’।

সঞ্চালক মৌসুমী মৌ প্রশ্ন করেন, অনেকের দামি ফোন থাকে না। কিন্তু কনটেন্ট তৈরি করতে চান। এ ক্ষেত্রে হাতে যে ফোনটা আছে, সেটা দিয়ে কি কনটেন্ট তৈরি করা সম্ভব?
জবাবে ওবায়দুর রহমান জানান, বর্তমানে অনেক এআই টুলস রয়েছে। আপনি কম দামি ফোন দিয়ে ভিডিও করলেও সেটা সেই টুলসের মাধ্যমে কোয়ালিটি বাড়াতে পারবেন। ক্যানভাতে এমন কিছু অপশন রয়েছে। অনেকেই অজুহাত দেখান, ভাই ১০-২০ হাজার টাকা দামের মোবাইল ব্যবহার করি; আমি তো মনে হয় কনটেন্ট বানাতে পারব না। ব্যাপারটা আসলে সেটা নয়। আপনি দেখবেন, গ্রামের অনেক লোক, যাঁদের তৈরি করা ভিডিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তাঁদের ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। কারণ, তাঁদের কনটেন্ট প্রেজেন্টেশন ভালো এবং এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে কনটেন্ট বানাচ্ছেন, সেটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। তাই কম দামি ফোন ইস্যু নয়, ইস্যু হলো ভালো কনটেন্ট হতে হবে।

দর্শক যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার কনটেন্ট দেখবেন বা এটার সঙ্গে এনগেজড থাকবেন, সেটার ওপর নির্ভর করে ফেসবুক আপনাকে পেমেন্ট করবে।

ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘কনটেন্ট তৈরির জন্য মোবাইল ফোনের গতি ভালো হতে হবে। ক্যামেরা ভালো হতে হবে। স্টোরেজ হাই থাকতে হবে এবং র‌্যাম ভালো থাকতে হবে। ভিডিওর প্রথম তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে এমন কিছু দর্শককে দেখাতে হবে, যাতে সে পুরো কনটেন্ট দেখার জন্য আগ্রহী হয়। রিচ বা ভিউ পাওয়া পুরোটাই কনটেন্ট উপস্থাপনের ওপর নির্ভর করে। উপস্থাপন আকর্ষণীয় হলে দেখা যায়, অনেক সাধারণ মানের ভিডিওও ভালো রিচ করে ফেলে।’

অনেক সময় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা তিন মিনিটের ভিডিও দিলে সেটা যে পরিমাণ রিচ হচ্ছে, সেই পরিমাণ আয় হচ্ছে না। অন্যদিকে অনেক ছোট ভিডিও ৫০ বা ৬০ সেকেন্ডের, সেটার রিচ অতটা না হলেও আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। এর কারণ কী?

জনপ্রিয় এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর জানান, দর্শক যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার কনটেন্ট দেখবেন বা এটার সঙ্গে এনগেজড থাকবেন, সেটার ওপর নির্ভর করে ফেসবুক আপনাকে পেমেন্ট করবে। ফেসবুকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি আয় করতে চান, তাহলে কম হলেও অন্তত ৫০ সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করতে হবে। পুরোটা ভিডিওটা মানুষ দেখলে আপনার আয় বাড়বে। আর যদি আপনার ভিডিও পুরোটা মানুষ না দেখে, তাহলে অনেক ভিউ হলেও আয় কম হবে। ফেসবুক রিলসের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৯০ সেকেন্ডের ভিডিও দেওয়াটা ভালো।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ কতগুলো পোস্ট দেওয়া উচিত, এ নিয়েও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে আসলে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। তবে ফেসবুক চায় বেশি বেশি পোস্ট করুন। কনটেন্ট পোস্ট করার জন্য ভালো সময় বলে কিছু নেই। আপনার কনটেন্ট ভালো হলে যেকোনো সময়ই এটা রিচ পাবে। তারপরও কিছু সময় আছে। যেমন সন্ধ্যা ৭-৮টা, রাত ১১টার পর পোস্ট না দেওয়াটাই ভালো, সকাল ৭-৮টার মধ্যে, দুপুর ১২-বেলা ২টার মধ্যে। আবার কিছু বিষয় আছে, যেমন আপনি পোস্ট করলেন দিনের বেলা; কিন্তু কনটেন্ট রাতের জন্য। সে ক্ষেত্রে রিচ কম হতে পারে। তাই রাতের কনটেন্ট রাতেই দেওয়া ভালো। এভাবে সময়টা ঠিক করলে দর্শকেরা পোস্টের সঙ্গে নিজেদের আগ্রহ খুঁজে পাবেন। দর্শকদের চাহিদা বুঝতে হবে। একটা উদাহরণ দিই, এই যেমন এখন গ্রীষ্মকাল। এখন যদি শীতকালের ভিডিও দিই, তাহলে কিন্তু ভিউ হবে না। দর্শক এই ভিডিও স্ক্রল করে যাবে। শীতকালের কনটেন্ট শীতকালেই দিতে হবে।’

এই পর্যায়ে মৌসুমী মৌ প্রশ্ন করেন, একই ভিডিও কি ফেসবুক, টিকটক বা ইউটিউবে আপলোড করা যাবে, নাকি কিছুটা এডিট করে দিতে হবে? ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘একই ভিডিও সব জায়গায় আপলোড করতে হবে। কপিরাইট সিস্টেম ম্যানেজমেন্টের জন্য এটা ভালো। অন্যথায় দেখা যাবে, টিকটকে আপনার ভিডিও আপলোড দিলে কপিরাইট দিবে ফেসবুক। তাই একই ভিডিও সব জায়গায় আপলোড দেওয়া উচিত।’

নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পরিশ্রমী হতে হবে। নিজেদের সৃজনশীলতা নিয়ে খেলা করুন। আমি চাই, মানুষ ব্যবসা কিংবা চাকরির পাশাপাশি আরেকটা আয়ের মাধ্যম দাঁড় করাক। নয়তো বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকা খুবই কঠিন। এই যুগে আপনি অলস হয়ে গেলে আপনার কোনো দাম থাকবে না। আপনি বেকার হয়ে বসে থাকবেন এবং বারবার অন্যকে দোষারোপ করতে থাকবেন। সরকার আমাকে এটা দেয় না, পরিবার এটা দেয় না, এই সুযোগ পাইনি, আমার কাছে টাকা নেই ইত্যাদি। তাই বলব, এখন থেকে প্রচুর অ্যাকটিভ হতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। নয়তো আগামী বিশ্বে টিকে থাকা অসম্ভব কঠিন।’